মালয়েশিয়ার খাদ্যপণ্যের বাজারের আকার এখন প্রায় ৬২ বিলিয়ন ডলার। প্রতি বছর এ বাজার ৬ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়ছে। এর মধ্যে হালাল খাদ্যের অংশই ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। চাহিদা মেটাতে দেশটি ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে।
খাদ্যাভ্যাসের কারণে বাংলাদেশী পণ্যের জন্যও মালয়েশিয়া হতে পারে বড় বাজার। দেশটিতে বসবাসরত স্থানীয়দের পাশাপাশি ভারতীয়, চীনা ও নেপালি জনগোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাসও বাংলাদেশের সঙ্গে মিলে যায়। ফলে নুডলস, স্ন্যাকস, বিস্কুট, ফ্রোজেন খাবার, মশলা ও পানীয়র মতো পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে।
কিন্তু বড় বাধা হচ্ছে উচ্চ শুল্ক। মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি না থাকায় বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তান বাণিজ্য চুক্তির কারণে অনেক ক্ষেত্রে স্বল্প শুল্ক বা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।
বর্তমানে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২৮০ কোটি ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয় মাত্র আড়াই থেকে ৩ কোটি ডলারের পণ্য, যা মূলত পোশাক ও কিছু মৌলিক খাদ্যপণ্য। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু হালাল খাদ্য খাতেই কয়েক বিলিয়ন ডলার রফতানির সুযোগ রয়েছে। এজন্য মালয়েশিয়ার সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) বা কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ) হলে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বহুগুণে বাড়বে।
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মাহবুব আলম শাহ বলেন, ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা পাচ্ছে। তারা সহজেই নিজেদের বাজার সম্প্রসারণ করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের একই ধরনের পণ্যে ২০-৩০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ থেকে প্রাণ, স্কয়ার, আকিজ, ওয়ালটন, মুন্নু সিরামিকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ায় পণ্য পাঠায়। প্রাণ গ্রুপ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলারের খাদ্যপণ্য রফতানি করছে। মশলা, নুডলস, জুস, বিস্কুট, কুকিজ ও ড্রিংকসসহ প্রায় ৮৫০টি পণ্য বাজারজাত করছে তারা। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান পিনাকল ফুডসের মাধ্যমে এসব পণ্য বিতরণ করা হয়।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী পণ্যের বাজার দিন দিন বাড়ছে। প্রাণের পণ্য এখন শুধু রাজধানী কুয়ালালামপুরেই নয়, গ্রামীণ এলাকাতেও পৌঁছে গেছে। সুপারশপ থেকে শুরু করে হাটবাজারেও পাওয়া যায় এসব পণ্য। কিন্তু উচ্চ শুল্কের কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে। তিনি মনে করেন, এফটিএ বা সিইপিএ হলে প্রাণের রফতানি কমপক্ষে পাঁচ গুণ বাড়বে। অন্য কোম্পানিগুলোর জন্যও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।
বর্তমানে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভারত, পাকিস্তানসহ প্রায় ১৪টি দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। এক দশক ধরে বাংলাদেশও চেষ্টা করলেও এখনো এফটিএ হয়নি। তবে গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়া সফরের পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, এফটিএ আলোচনার জন্য ইতোমধ্যে একটি টার্মস অব রেফারেন্সের খসড়া তৈরি হয়েছে। অনুমোদন হলে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে।
দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার শাহানারা মনিকা বলেন, শুল্ক ও বিধি-নিষেধ সহজ না করলে প্রতিযোগিতা টিকবে না। এফটিএ ছাড়া রফতানি বাড়ানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি সেবা খাতের মাধ্যমেও বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যেতে পারে।