দেশের আর্থিক খাত এখন এক নতুন ঝুঁকিতে পড়েছে। অতিরিক্ত সংখ্যক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি (সিআরএ) গড়ে ওঠায় ব্যাংকিং খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। রেটিং নির্ধারণী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আপস করছে। এতে গুণমান ও মূল্য যাচাইয়ের জায়গায় বড় ধরনের দুর্বলতা তৈরি হয়েছে।
আজ সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আয়োজিত এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরেন আমেরিকার নিউ অরলিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম কবির হাসান। তিনি মূল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
অধ্যাপক কবির হাসান বলেন, তুলনামূলক ছোট অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে বর্তমানে ৮টি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি রয়েছে। অথচ ভারতে রয়েছে ২টি, মালয়েশিয়ায় ২টি, চীনে ৩টি, কোরিয়ায় ৩টি এবং থাইল্যান্ডে মাত্র ২টি। অন্য কোনো দেশে এত বেশি রেটিং এজেন্সি নেই। তিনি উল্লেখ করেন, কাজের অভাবে এসব এজেন্সি টিকে থাকার জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মান যাচাই হয়নি। মানহীন রেটিং থাকলেও অনেক ব্যাংক উচ্চ রেটিং দেখিয়ে সুবিধা নিয়েছে। এতে পুরো খাত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
প্রেজেন্টেশনে জানানো হয়, ২০০৪-২০০৫ সালে দেশে মাত্র দুটি রেটিং এজেন্সি ছিল। এগুলো হলো— ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (সিআরআইএসএল) এবং ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিআরএবি)। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাসল-২’ বাস্তবায়নের জন্য আরও কিছু এজেন্সি অনুমোদনের অনুরোধ করে। এর ধারাবাহিকতায় ৬টি নতুন এজেন্সি লাইসেন্স পায় এবং বাজারে প্রবেশ করে। তবে কোনো বাজার সমীক্ষা বা বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা ছাড়াই এসব অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
অধ্যাপক কবির হাসান সতর্ক করে বলেন, মানহীন রেটিং ব্যাংকিং খাতের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বন্ড বাজারকে টেকসই করতে এবং ব্যাংকগুলোর মূলধন শক্তিশালী রাখতে রেটিং এজেন্সিগুলোর সমস্যা দ্রুত সমাধানে নিয়ন্ত্রকদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।