অক্টোবর–নভেম্বর হলো আয়কর রিটার্ন দেওয়ার মৌসুম। এ সময় টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর)ধারীরা কাগজপত্র সংগ্রহ, ফরম পূরণ ও রিটার্ন জমা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টিআইএনধারী আছেন। তবে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৪০ লাখ টিআইএনধারী আয়-ব্যয়ের হিসাব দিয়ে রিটার্ন জমা দেন।
কারা রিটার্ন দেবেন?
এনবিআর জানিয়েছে, করদাতাদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. যাঁদের করযোগ্য আয় আছে।
২. আয় যাই হোক না কেন, যাঁদের রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক।
আয়ের ভিত্তিতে বাধ্যতামূলক রিটার্ন
ছয় শ্রেণির করদাতাকে আয়ের কারণে রিটার্ন দিতে হবে—
- কোনো ব্যক্তির আয় বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি হলে।
- নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার আয় বছরে ৪ লাখ টাকার বেশি হলে।
- তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধী করদাতার আয় বছরে পৌনে ৫ লাখ টাকার বেশি হলে।
- গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার আয় বছরে ৫ লাখ টাকার বেশি হলে।
- প্রতিবন্ধী সন্তানের অভিভাবকের করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকা বেশি হলে (একজন অভিভাবক সুবিধা নিতে পারবেন)।
- তবে বিদেশি অনিবাসী করদাতাদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
আয়ের পরিমাণ যাই হোক, এনবিআর কিছু পেশাজীবী ও কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করেছে। নির্দেশনায় ৪৫ ধরনের শর্ত রয়েছে-
১. করদাতার মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলে।
২. পূর্ববর্তী তিন বছরের যেকোনো বছরে কর নির্ধারণ হয়ে থাকলে।
৩. কোম্পানি, কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার কর্মচারী হলে।
৪. ফার্ম, ফার্মের অংশীদার বা ব্যক্তিসংঘ হলে।
৫. ব্যবসায় নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদে বেতনভোগী কর্মী হলে।
৬. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হলে।
৭. বাংলাদেশে স্থায়ী স্থাপনা থাকা অনিবাসী হলে।
৮. কর অব্যাহতি পাওয়া বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য আয় থাকলে।
৯. আয়কর আইনের ধারা ২৬১ অনুসারে করদাতা হিসেবে নিবন্ধনযোগ্য হলে।
১০. করারোপযোগ্য আয় না থাকলেও ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে।
১১. আমদানি নিবন্ধন সনদ বা রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নিতে বা নবায়ন করতে।
১২. সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে।
১৩. সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের লাইসেন্স নবায়ন করতে।
১৪. জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয়, লিজ, হস্তান্তর বা নিবন্ধন করতে।
১৫. চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, কর আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার ইত্যাদি পেশাজীবীদের সদস্যপদ নবায়নে।
১৬. মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক বা স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে লাইসেন্স নিতে বা নবায়ন করতে।
১৭. কোনো বাণিজ্যিক সংগঠনের সদস্যপদ পেতে বা বহাল রাখতে।
১৮. দলিল লেখক, স্ট্যাম্প বা কোর্ট ফি বিক্রেতার লাইসেন্স নবায়নে।
১৯. ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই, কাস্টমস এজেন্ট, বন্ডেড ওয়্যারহাউস, ফ্রেট ফরওয়ার্ডিং বা বায়িং হাউস নিবন্ধন নিতে বা নবায়নে।
২০. বাণিজ্যিক/শিল্প গ্যাস সংযোগ পেতে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ পেতে।
২১. সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে।
২২. ভাড়ায় চালিত নৌযানের (লঞ্চ, কার্গো ইত্যাদি) সার্ভে সার্টিফিকেট পেতে বা নবায়নে।
২৩. ইটভাটা চালাতে পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে।
২৪. সিটি করপোরেশন বা পৌরসভায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সন্তান ভর্তি করাতে।
২৫. কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিতে বা বহাল রাখতে।
২৬. আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিতে বা নবায়নে।
২৭. আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলায়।
২৮. ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত খুলতে বা বহাল রাখতে।
২৯. ১০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে।
৩০. পৌরসভা, সিটি করপোরেশন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে।
৩১. ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক বা উৎপাদন তত্ত্বাবধানকারী পদে কর্মরত ব্যক্তির বেতন–ভাতা নিতে।
৩২. কোম্পানি ছাড়া অন্য করদাতা হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং/ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার বা রিচার্জ কমিশন থেকে আয় পেলে।
৩৩. অ্যাডভাইজরি, কনসালট্যান্সি, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল বা নিরাপত্তাসেবা বাবদ কোনো কোম্পানি থেকে অর্থ পেলে।
৩৪. বিমা কোম্পানির এজেন্সি সার্টিফিকেট নিতে বা নবায়নে।
৩৫. মোটরযান (মোটরসাইকেল ছাড়া) নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে।
৩৬. এনজিও ব্যুরো বা ক্ষুদ্রঋণ কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বিদেশি অনুদান ছাড় করতে।
৩৭. ই–কমার্স ব্যবসায় লাইসেন্স নবায়নে।
৩৮. কোম্পানি আইন বা সোসাইটিজ অ্যাক্টে নিবন্ধিত ক্লাবের সদস্যপদ নিতে বা নবায়নে।
৩৯. টেন্ডারে অংশ নিতে পণ্য সরবরাহ, চুক্তি বা সেবা প্রদানের সময়।
৪০. পণ্য আমদানি বা রপ্তানির সময় বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে।
৪১. রাজউক, সিডিএ, কেডিএ, আরডিএ, গাজীপুর বা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনের নকশা অনুমোদনের সময়।
৪২. সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ নেওয়ার সময় বাড়ির মালিকের।
৪৩. পণ্য বা সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে সরবরাহকারী বা সেবা প্রদানকারীর।
৪৪. হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নিতে বা নবায়নে।
৪৫. সামাজিক অনুষ্ঠান, করপোরেট প্রোগ্রাম, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হল ভাড়া নিলে।
সব মিলিয়ে করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক, এসব ক্ষেত্রে টিআইএনধারীদের জন্য রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক।

