আগস্ট মাসে ব্যাংক খাতে ঋণের চিত্রে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে। কয়েক মাস আগে তারল্য সংকট নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও এখন অনেক ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত নগদ অর্থ রয়েছে। এর ফলে নতুন ঋণের চাহিদা কমেছে আর পুরোনো ঋণ পরিশোধ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, আগস্টে কলমানি, রেপো, বিশেষ তারল্য সহায়তা (এসএলএফ) ও সরকারি ট্রেজারি বিল—সব ক্ষেত্রেই ঋণ কমেছে। এক মাসেই নিট ঋণ হ্রাস পেয়েছে ১৬ হাজার ১০৫ কোটি টাকা।
আগস্টে কলমানি মার্কেটে গড় সুদহার দাঁড়ায় ১০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এ সময়ে ঋণ দেওয়া হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ১২৫ কোটি টাকা, ফেরত আসে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। ফলে নিট ধার কমে ৯৩৪ কোটি টাকা। জুলাইয়ে ঋণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, ফেরত আসে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। তখন ঋণ বেড়েছিল ৩৫৭ কোটি টাকা। ওই মাসে সুদহার ছিল ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগস্টে ১০ শতাংশ হারে রেপোতে ঋণ দেওয়া হয় ১ লাখ ৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। ফেরত আসে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। ফলে নিট ঋণ কমে ৬ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। জুলাইয়ে এ খাতে ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩২০ কোটি টাকা এবং ফেরত আসে ১ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সে সময় ঋণ বেড়েছিল ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা।
আগস্টে এসএলএফের আওতায় ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয় ১ লাখ ১৮ হাজার ১০ কোটি টাকা। ফেরত আসে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা। ফলে নিট ঋণ কমেছে ৭ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। জুলাইয়ে এ খাতে ঋণ দেওয়া হয়েছিল ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা, ফেরত আসে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। তখন নিট ঋণ কমেছিল ১০ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। আগস্টে ট্রেজারি বিলে গড় সুদ দাঁড়ায় ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। ঋণ দেওয়া হয় ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ফেরত আসে ৩২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। ফলে নিট ঋণ কমে ৮৯৮ কোটি টাকা। জুলাইয়ে ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ হারে ঋণ দেওয়া হয়েছিল ৩৪ হাজার কোটি টাকা, ফেরত আসে ৩৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। সে ক্ষেত্রে নিট ঋণ কমেছিল ৩ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক খাতে নগদ অর্থ বেড়েছে। ফলে আগস্টে সুদহার কিছুটা কমলেও কলমানিতে নতুন ধার কমে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমানত বেড়েছে এবং করপোরেট ঋণের চাহিদা অনেকটা কমে গেছে। কেবল ভোক্তা ঋণের কিছু চাহিদা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেনায় বাজারে তারল্যও বেড়েছে। তাই ঋণ পরিশোধের প্রবণতা বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডলার কেনার ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে বাড়তি নগদ এসেছে কিন্তু ঋণের চাহিদা না থাকায় অনেক ব্যাংকের কাছে অলস টাকা রয়ে গেছে। ফলে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে, নতুন ঋণ কমেছে।

