মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ৪৭ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তর। তবে প্রকল্পের বড় একটি অংশ অর্থাৎ ২২ কোটি টাকা কোন খাতে ব্যয় হবে, তার সঠিক কারণ খুঁজে পাচ্ছে না পরিকল্পনা কমিশন। ফলে প্রকল্পের খরচ ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
‘জবই বিল ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিলসমূহে মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ৪৭ কোটি ২১ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০২৯ পর্যন্ত এ প্রকল্প চলবে। বাস্তবায়ন করা হবে নওগাঁর সাপাহার ও মান্দা, রাজশাহীর তানোর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায়।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) মাছের আবাসস্থল উন্নয়ন খাতে ২২ কোটি ৮ লাখ টাকা রাখা হলেও এর বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন নেই। খাল খননের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বরাদ্দ রাখা হয়নি। মাছের আড়ত উন্নয়নে ৬০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হলেও কোন এলাকায় তা হবে উল্লেখ নেই। এ ছাড়া ১৫টি মৎস্য অভয়াশ্রম নির্মাণ খাতে আগে ১ কোটি ৫২ লাখ টাকার প্রস্তাব ছিল, যা বাড়িয়ে ১৬টি অভয়াশ্রমের জন্য ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এ ব্যয়ের যৌক্তিক ব্যাখ্যাও চাইছে কমিশন।
প্রকল্পে হায়ারিং চার্জে ৮৬ লাখ টাকা, সেমিনার ও ওয়ার্কশপে ৯৪ লাখ টাকা, ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে ৭৫ লাখ টাকা এবং অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। এগুলোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। এছাড়া পোনা মাছ অবমুক্তি খাতে ১ কোটি ৬৫ লাখ, জিআইএসভিত্তিক ম্যাপিংয়ে আড়াই কোটি এবং স্পিলওয়ে মেরামতে ১ কোটি টাকা খরচের কারণও জানতে চেয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের বন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উইংয়ের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) ড. অঞ্জন কুমার দেব বলেন, “প্রকল্পের নানা খাতের ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। সংশ্লিষ্ট দপ্তর লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছে। এখন প্রকল্পটি প্রসেস করা হবে।” এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, “আমরা প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনা করেছি। যেসব খাতে বেশি ধরা হয়েছিল, তা ঠিক করে দিয়েছি। পরিকল্পনা কমিশনের সব ব্যাখ্যা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি প্রকল্পটি শিগগির অনুমোদন পাবে।” গত ২৯–৩০ মে পাঁচ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়—
- বিলের পানির প্রবাহ বাড়াতে তলদেশ ও সংযোগ খাল খনন জরুরি।
- গভীর স্থানে অভয়াশ্রম স্থাপন করতে হবে।
- স্থানীয় মৎস্যজীবীদের পাহারায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
- বিল নার্সারি স্থাপন করে মাছের রেণু উৎপাদন বাড়াতে হবে।
- স্পিলওয়ে মেরামত জরুরি।
- মাছ বাজারজাতকরণে আড়ত স্থাপন করতে হবে।
- বিল এলাকায় হিজল ও করচ গাছ রোপণ করতে হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছ সংরক্ষণ সম্ভব হবে। পাশাপাশি দারিদ্র্য হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে কৃষিজ আয়ের ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ আসে মৎস্য উপখাত থেকে। জাতীয় অর্থনীতি ও রপ্তানি আয়ে খাতটির অবদান গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি বিল উৎপাদনশীলতার দিক থেকে আরও সমৃদ্ধ হবে।