যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপে বৈশ্বিক রপ্তানি বাণিজ্যে বড় পরিবর্তন এসেছে। উচ্চ শুল্ক এড়াতে চীন এখন ক্রমেই ইউরোপীয় ইউনিয়নমুখী হচ্ছে। দেশটি ইইউতে পোশাক রপ্তানি বাড়াচ্ছে। এতে প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের রপ্তানিতে। বিশেষ করে ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ। কাঁচামাল, কম লিড টাইম এবং উৎপাদনশীলতায় তারা অনেক এগিয়ে। ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সুবিধা নিচ্ছে দেশটি। ইইউতে তাদের রপ্তানি বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। তাদের আশঙ্কা, আগামীতে চীনের বাজার দখল আরও বাড়তে পারে। ইইউর সরকারি সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত জুলাই মাসে ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। একই মাসে চীনের রপ্তানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। অথচ কয়েক মাস আগেও প্রবৃদ্ধির এই ব্যবধান এতটা ছিল না।
চলতি বছরের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এ সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি ছিল। চীনের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ শতাংশ। তবে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসের গড়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশে। একই সময়ে চীনের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ জুলাইয়ে চীনের প্রবৃদ্ধি চার গুণ বেশি হলেও সামগ্রিক গড়ে ব্যবধান তুলনামূলক কম।
পরিসংখ্যান বলছে, জুলাইয়ে ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ১৬৮ কোটি ডলারের কম। চীনের রপ্তানি ছিল ২৭৮ কোটি ডলারের বেশি। আবার বছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দাঁড়ায় এক হাজার ১৯৭ কোটি ডলার। চীনের আয় হয় এক হাজার ৪০৬ কোটি ডলার। একই সময়ে ইইউতে মোট পোশাক আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ১৯২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল থেকে সব দেশের পণ্যে ১০ শতাংশ এবং বাংলাদেশসহ ৬৫ দেশের পণ্যে অতিরিক্ত পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে চীনা পণ্যে সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের কথাও শোনা যায়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের রপ্তানি কঠিন হয়ে ওঠে। অনেক অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক আগেই আশঙ্কা করেছিলেন, চীন বাধ্য হয়ে ইউরোপমুখী হবে।
রপ্তানি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানোয় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের পণ্য সরবরাহ কমছে। এতে তারা বিকল্প হিসেবে ইইউতে চাপ বাড়াচ্ছে। ফলে সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা তুলনামূলক কম থাকায় দাম কমানোর চাপ তৈরি হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিযোগী দেশগুলো, বিশেষত বাংলাদেশ।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের কথা শোনা গেলেও পরে তা ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এ হারও বাংলাদেশের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। ফলে চীন স্বাভাবিকভাবেই ইইউতে রপ্তানি বাড়াচ্ছে। আমাদের এখন শুল্কমুক্ত সুবিধা সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগিয়ে ইইউ বাজারে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত।”
বর্তমানে ইইউতে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ হলো চীন। বাংলাদেশ আছে দ্বিতীয় স্থানে। তুরস্ক তৃতীয়, ভারত চতুর্থ ও কম্বোডিয়া পঞ্চম। ষষ্ঠ অবস্থানে ভিয়েতনাম, এরপর পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া।