৭টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনমনীয় বা কঠিন শর্তের ঋণ নিচ্ছে সরকার। গতকাল বুধবার রাজধানীর শেরে-বাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত স্ট্যান্ডিং কমিটি অন নন-কনসেশনাল লোন (এসসিএনসিএল) কমিটির সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা।
ইআরডি জানায়, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বা অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে নেওয়া এসব ঋণে অনুদান বা ভর্তুকির অংশ খুবই কম। বাজারভিত্তিক সুদে নেওয়া হওয়ায় এগুলো অনমনীয় শর্তের ঋণ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো ঋণের গ্রান্ট উপাদান যদি ২৫ শতাংশের নিচে হয়, তবে সেটি নন-কনসেশনাল বা অনমনীয় ঋণ ধরা হয়।
এডিবির তিন নতুন প্রকল্প: এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে তিনটি নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে—
- নেটওয়ার্ক নর্থওয়েস্ট ডিস্ট্রিবিউশন মডার্নাইজেশন প্রজেক্ট– ৯১ মিলিয়ন ডলার
- চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ ডুয়েল গেজ রূপান্তর প্রকল্প– ৫০৮ মিলিয়ন ডলার
- খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২)– ১৫৪ মিলিয়ন ডলার
চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের মেয়াদ ২৫ বছর, গ্রেস পিরিয়ড ৫ বছর। সুদ হবে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) + লেন্ডিং স্প্রেড + ম্যাচুরিটি প্রিমিয়াম। এছাড়া দিতে হবে ০.১৫ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি। এসওএফআর ৪.৩৯ শতাংশ ধরা হলে এ ঋণের গ্রান্ট উপাদান দাঁড়ায় মাত্র ০.৮৬ শতাংশ।
খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পে এডিবির ১৫৪ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ মিলিয়ন নমনীয় ঋণ, ৫০ মিলিয়ন ওসিআর ঋণ এবং ৪ মিলিয়ন ডলার অনুদান। এ ঋণের সুদের শর্তও আগের মতোই। এখানে গ্রান্ট উপাদান মাত্র ১.০৫ শতাংশ। অন্যদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) প্রকল্প নেটওয়ার্ক নর্থওয়েস্ট ডিস্ট্রিবিউশন মডার্নাইজেশন-এর জন্য ৯১ মিলিয়ন ডলারের অনমনীয় ঋণ অনুমোদিত হয়েছে। এ ঋণের গ্রান্ট উপাদান ২.৯৪ শতাংশ।
পুরোনো চার প্রকল্পও অনুমোদিত: নতুন তিন প্রকল্প ছাড়াও চারটি পুরোনো ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিটি।
- ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) অর্থায়নে ময়মনসিংহে জলবায়ু সহনশীল ৫টি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ২৪১.৩ মিলিয়ন ডলার। এ ঋণের সুদের হার হবে এসওএফআর + বিভিন্ন স্প্রেড ও রিস্ক প্রিমিয়াম মিলে মোট ৫.৮৫ শতাংশ। এতে গ্রান্ট উপাদান দাঁড়ায় ১০.০৩ শতাংশ।
- এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) অর্থায়নে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-সাবপ্রোগ্রাম ২ প্রকল্পে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ।
- ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের (ইআইবি) অর্থায়নে দুটি প্রকল্পে ঋণ অনুমোদন হয়—ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই (৭০ মিলিয়ন ইউরো) এবং সৈয়দাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ফেজ-৩) (৯০ মিলিয়ন ইউরো)।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসওএফআর হার বর্তমানে বেশি হওয়ায় এসব ঋণের গ্রান্ট উপাদান উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে সুদের হার পরিবর্তন হলে গ্রান্ট উপাদানও সময়ে সময়ে ওঠানামা করবে। ফলে ঋণের চাপ নমনীয় হওয়ার সম্ভাবনা খুবই সীমিত।

