দক্ষিণ ইরানের হরমোজগান প্রদেশে নতুন করে চারটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করেছে তেহরান ও মস্কো। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ গতকাল শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
চুক্তির আওতায় সিরিক শহরের উপকূলে ৫০০ হেক্টর জমির ওপর আধুনিক প্রজন্মের চারটি রিঅ্যাক্টর নির্মিত হবে। এসব রিঅ্যাক্টর থেকে মোট ৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। হরমোজগান প্রদেশ কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপরীতে উপসাগরের অপরপ্রান্তে অবস্থিত। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ইরানের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। তবে এবারকার প্রকল্পের পরিমাণ ও গুরুত্ব অনেক বেশি।
বর্তমানে ইরানের একমাত্র কার্যকরী পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলীয় বুশেহরে। রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মিত ওই কেন্দ্র থেকে ১ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। তবে দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকায় প্রায়ই ঘাটতির মুখে পড়তে হয়, বিশেষত গ্রীষ্মকালে। নতুন চারটি কেন্দ্র চালু হলে সেই ঘাটতি অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই বড় চুক্তি এমন সময়ে হলো, যখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও রাশিয়ার সমর্থনে একটি প্রস্তাব ভোটে উঠতে যাচ্ছে। প্রস্তাবটিতে অন্তত ছয় মাসের জন্য ইরানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছে।
ইসরায়েল এমনকি দাবি করেছে—তেহরান পারমাণবিক অস্ত্রের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। যদিও এখন পর্যন্ত তারা এর কোনও প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের কিছু স্থাপনায় হামলাও চালায়, যা রাশিয়া কঠোর ভাষায় নিন্দা জানায়।
অন্যদিকে ইরান বারবার বলছে, তাদের উদ্দেশ্য শুধুই শান্তিপূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদন। জাতিসংঘে ভাষণ দিতে গিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান স্পষ্ট করে বলেন, “তেহরান কখনও পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে হাঁটবে না।” নতুন এই ২৫ বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক প্রকল্প তাই শুধু বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগই নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনীতিতে ইরান-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেরও একটি শক্তিশালী প্রতীক হয়ে উঠেছে।