বাংলাদেশের মোট প্রদত্ত ঋণের প্রায় ৭৮ শতাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ। ফলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পিছিয়ে পড়ছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে পিআরআই সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে “বাংলাদেশ কি বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব?” শীর্ষক নিবন্ধ উপস্থাপনকালে এই গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়। গবেষণার ফল জানাতে গিয়ে পিআরআই পরিচালক ড. আহমদ আহসান বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র। জনসেবা, নগর শাসন ও অর্থপ্রবাহ—সবক্ষেত্রেই এর প্রতিফলন দেখা যায়।
তিনি জানান, ২০২৪ অর্থবছরে প্রদত্ত মোট ঋণের ৭৮.৪ শতাংশই ঢাকা ও চট্টগ্রামে গেছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই ৬২.৯৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৫.৪৫ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জে ১.৫৪ শতাংশ, খুলনায় ১.২৭ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ১.২৭ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বান্দরবান কোনো ঋণই পায়নি। খাগড়াছড়ি পেয়েছে ০.০৬ শতাংশ, রাঙ্গামাটি ০.০৬ শতাংশ, মেহেরপুর ০.০৭ শতাংশ এবং ঝালকাঠি ০.০৮ শতাংশ।
ড. আহসান বলেন, এই কেন্দ্রীকরণ নতুন ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। আঞ্চলিক বৈষম্য বাড়াচ্ছে। দেশের ব্যাংক ও ঋণ খাত সম্প্রসারিত হলেও এর সুবিধা মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রামেই সীমাবদ্ধ। ফলে অন্যান্য জেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বিকাশে বাধা তৈরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে নগর শিল্পে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ২০১০-২০১৭ সময়ের তুলনায় অনেক ধীর হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ পিছিয়ে পড়া এবং ব্যাংকিং সেবার কেন্দ্রীকরণ এ প্রবণতাকে আরও বাড়িয়েছে।
পিআরআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৫টি পৌরসভা ৪০টিরও বেশি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। এতে স্থানীয় মেয়রদের পানি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো সেবা সমন্বয় কার্যত অক্ষম হয়ে পড়ছে। গবেষণায় সুপারিশ করা হয়, স্থানীয় সরকারের বাজেট অন্তত জিডিপির ১ শতাংশ করতে হবে। ঢাকায় সম্পত্তি কর সংগ্রহ বাড়াতে হবে, যা বর্তমানে মাত্র ০.১৩ শতাংশ। চট্টগ্রামে তা ০.০৬ শতাংশ। পাশাপাশি সেবা, বিনিয়োগ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বার্ষিক স্কোরকার্ড চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
আলোচনায় পিআরআই-এর সিনিয়র ফেলো মো. মাশরুর রিয়াজ বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অতিরিক্তভাবে ঢাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় রাজধানীতে যানজটে বছরে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে কেন্দ্র ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো জরুরি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআই নির্বাহী পরিচালক খুরশিদ আলম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বাদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলেও মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনমানের উন্নতি হয়নি। এজন্য ক্ষমতা ও দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের হাতে হস্তান্তর করা জরুরি।