জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কারের সুপারিশ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হলে সংস্থার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন পরামর্শক কমিটির সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, পরামর্শক কমিটি রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ আলাদা করার সুপারিশ করেছিল। তবে তা এখনও করা হয়নি।
গতকাল রাজধানীর গুলশানের পুলিশ প্লাজায় ‘বাংলাদেশে কার্যকর শাসন ব্যবস্থা ও কর সংস্কার’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এই তথ্য উঠে আসে। আলোচনা আয়োজন করে মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ। ফরিদ উদ্দিন বলেন, “কমিটি সুপারিশ করেছিল দুটি বিভাগ আলাদা করার। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। যদি সরকার সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয়, বর্তমান পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।” তিনি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ফোরামে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, “গত ১০-১৫ বছরে ব্যবসায়ীরা এনবিআরের বিষয়ে যেসব দাবি ও মতামত জানিয়েছিলেন, সব মূল্যায়ন করে সংস্কার কমিটি সুপারিশ আকারে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদন মতামতের জন্য ৭৫টি প্রতিষ্ঠান, চেম্বার ও সংস্থায় পাঠানো হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলের কাছেও মতামত চাওয়া হয়েছিল কিন্তু পূর্ণাঙ্গ উত্তর পেয়েছি শুধু ফরেন চেম্বার থেকে। ঢাকা চেম্বার, এমসিসিআই ও আইসিএমএবি থেকে আংশিক মতামত এসেছে। বাকিরা কিছু জানাননি।”
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, “ব্যবসায়ী ও অংশীজনদের সুপারিশগুলো গ্রহণ করা জরুরি। প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, অধ্যাদেশও হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক কমিটমেন্ট না থাকলে বাস্তবায়ন কঠিন।” তিনি জানান, কর ব্যবস্থাপনা ও কর নীতি আলাদা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল বেসরকারি খাতকে নীতি প্রণয়ে যুক্ত করা। সুপারিশে নীতি প্রণয়নে বেসরকারি খাতের কিছু ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে বলা হয়েছিল এবং নীতিটি অন্তত পাঁচ বছর মান্য করার কথা বলা হয়েছিল।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান মনে করেন, এনবিআরের দুই ভাগ করলে সব সমস্যা সমাধান হবে না। তিনি বলেন, “রাজস্ব বোর্ড ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। কর নীতি কমপক্ষে পাঁচ বছর স্থায়ী করতে হবে। আইন, এসআরও, বিধি-বিধান ও প্রজ্ঞাপন প্রণয়নে অংশীজনদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।”
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “রফতানিমুখী শিল্প খাতের বর্তমান করনীতি বেআইনি এবং মানবাধিকারবিরোধী। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন। এতে সময় এবং খরচ উভয়ই বাড়ে।”
সভায় মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, “দেশে মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ আয়কর দেন। ব্যবসায়িক পর্যায়ে কর ফাঁকিও বড়। কর আইন কার্যকর করতে পারদর্শিতা কম। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কর সংগ্রহ ব্যবস্থা জটিল ও স্বেচ্ছাচারিতামূলক।”
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, “সরকারের হাতে বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট টাকা নেই। এতে অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও আইন-শৃঙ্খলা খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবও রয়েছে। ব্যক্তিগত খাতও সেবা পেতে সমস্যায় পড়ছে।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এএম মাহবুব চৌধুরী, এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া, স্কয়ার ফার্মার নির্বাহী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মেট্রোপলিটন চেম্বার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ এন করিম।