মার্কিন বিমান নির্মাতা বোয়িংয়ের শেয়ার দাম গত শুক্রবার প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) কোম্পানির ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানের ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতা শিথিল করার খবর শেয়ার বৃদ্ধির মূল কারণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত বোয়িংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ দুই মডেলের বিমানের ওপর কড়া নজরদারি চলছিল। মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার ১৮ মাসের কঠোর মূল্যায়নের পর এফএএ বোয়িংকে কিছু ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের জন্য নিরাপত্তা সনদ দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে। একসময় বোয়িং নিজেই এই ক্ষমতা রাখতো। তবে একাধিক দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তার ত্রুটির কারণে এ অনুমতি বোয়িং থেকে নেওয়া হয়েছিল।
সাধারণত বিমান নির্মাতারা এফএএর পক্ষ থেকে ওড়ার উপযুক্ততা ও উৎপাদন সনদ প্রদানের অনুমতি পায়। কিন্তু ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৮৭ মডেলে তা হারিয়েছিল। মূলত ২০১৯ সালে লায়ন এয়ারের দুর্ঘটনা এবং ২০২২ সালে ইথিওপিয়ান এয়ার দুর্ঘটনার পর এই অনুমতি বাতিল করা হয়েছিল। জানুয়ারি ২০২৪ সালে ৭৩৭ ম্যাক্সের একটি দরজার প্লাগ ভাঙার ঘটনায় সরকারি তদন্তে অসঙ্গতি ধরা পড়ায় বোয়িং আরও চাপে পড়ে।
এরপর দুই মডেলের সব বিমান প্রায় ২০ মাস বসানো হয়। বোয়িং বিমানের মান ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে বড় পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বোয়িংয়ের প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়। তবে এফএএ এখনো পূর্ণভাবে বোয়িংকে নিরাপত্তা সনদ দেওয়ার ক্ষমতা দিচ্ছে না। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রতি দুই সপ্তাহে একবার বোয়িং বিমান ওড়ার উপযুক্ততা সনদ দিতে পারবে, অন্য সময় সনদ দেবে এফএএ।
এফএএ জানিয়েছে, “নিরাপত্তা আমাদের মূল লক্ষ্য। বোয়িংয়ের চলমান উৎপাদন মানের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ পদক্ষেপে সংস্থা উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় আরও বেশি নজরদারি করতে পারবে।” তবে সংস্থা বোয়িংয়ের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ‘সরাসরি ও কঠোর নজরদারি’ বজায় রাখবে। গত দেড় বছরে কয়েকজন হুইসেলব্লোয়ার বোয়িংয়ের নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণের ত্রুটি প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৮৭ মডেলের উৎপাদনের প্রক্রিয়াও রয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের বিচার বিভাগ মনে করেছিল, বোয়িংয়ের বিমানে নিরাপত্তার ত্রুটি আগে করা চুক্তি লঙ্ঘনের কারণে হচ্ছে। বোয়িং গত বছর দুই প্রাণঘাতী ৭৩৭ ম্যাক্স দুর্ঘটনার জন্য দোষ স্বীকার করেছিল। ওই দু’টি দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জন নিহত হয়েছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসন পরে এই ফৌজদারি মামলা তুলে নেয়।
সম্প্রতি বোয়িং টার্কিশ এয়ারলাইনস ও নরওয়েজিয়ান গ্রুপের কাছ থেকে নতুন বিমান সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও জাপান শত শত যাত্রীবাহী বিমান কিনবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বছরের শুরুতে বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতারও বোয়িংয়ের বিমান কেনার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বাণিজ্যচুক্তির অংশ হিসেবে বোয়িং ধারাবাহিকভাবে নতুন কার্যাদেশ পাচ্ছে। বাংলাদেশও শুল্ক ও দর–কষাকষির পর বোয়িং থেকে ২৫টি বিমান কিনবে।
এই চুক্তি ও নিরাপত্তা সনদ পুনর্বহালের পদক্ষেপে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। বিশ্লেষকেরা বোয়িংয়ের ব্যবসায়িক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দেখছেন। তবে গত কয়েক বছরের সংকটের প্রেক্ষাপটে সামনের দিনগুলোয় চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে।