আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জন্য বিদেশি ঋণের সীমারেখা টেনে দিয়েছে। সংস্থার ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৮৪৪ কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে।
গত জুনে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩৪ কোটি ডলার ছাড়ের পর আইএমএফ ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্ট’ প্রকাশ করে। ওই রিপোর্টে পরবর্তী কিস্তি পেতে যে শর্ত মানতে হবে, তার মধ্যে নতুন ঋণ সীমা অন্যতম। আইএমএফ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণও নির্ধারণ করেছে। প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ ১৯১ কোটি ডলার, ছয় মাস শেষে ৩৩৪ কোটি, ৯ মাসে ৪৩৪ কোটি এবং পুরো অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮৪৪ কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে। প্রতি তিন মাস অন্তর বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে সংস্থা।
আইএমএফ ২০২৩ সালে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছিল। তখন এমন কোনো শর্ত ছিল না। কিন্তু জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি অনুমোদনের মাধ্যমে মূল ঋণের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পায় এবং মেয়াদও ছয় মাস বাড়ানো হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ আইএমএফের এই ঋণ প্রোগ্রাম থেকে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আইএমএফের সর্বশেষ ঋণ স্থায়িত্ব বিশ্লেষণ (ডিএসএ) অনুসারেই নতুন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই বিশ্লেষণে বাংলাদেশকে টানা দুই অর্থবছর ধরে ‘মধ্যম ঝুঁকি’র দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগে ‘কম ঝুঁকি’ বিবেচিত হলেও রপ্তানি ও রাজস্ব আয়ের তুলনায় ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডিএসএ অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণ-রপ্তানি অনুপাত ১৬২ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এটি প্রাক্কলিত ১১৬-১১৮ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। বিদেশি ঋণ-রাজস্ব অনুপাতও বেড়ে যাওয়ায় নতুন ঋণ নেয়ার সক্ষমতা সীমিত হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মেগা প্রকল্প ও করোনা খরচের কারণে বিদেশি ঋণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ তিনগুণের বেশি বেড়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দ্রুত ঋণ বৃদ্ধির রেকর্ড।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ ছিল ২০৩ কোটি ডলার। এটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০২ কোটি ডলার। শুধু গত জুন মাসেই আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বাংলাদেশ ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছে। ফলস্বরূপ, দেশের বৈদেশিক ঋণ ১১২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার বা ১১ হাজার ২১৫ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। প্রতি ডলারের মান ১২২ টাকা ধরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়াবে।