দেশ থেকে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে পাচারকারীরা সরকারের চেয়ে আরও স্মার্ট। জটিল কৌশল ব্যবহার করে তারা টাকা বাইরে পাঠাচ্ছে। তাই আরও কার্যকর তদারকি ও স্বচ্ছতা জরুরি। এ মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
গতকাল সোমবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘ফাইন্যান্সিয়াল ট্রান্সপারেন্সি ইন করপোরেট সেক্টর’ শীর্ষক সেমিনার এবং ইআরএফ ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সভাপতি এন কে এ মবিন এবং আইসিএবির সিইও শুভাশীষ বসু।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোম্পানিগুলো নানা জটিল কৌশল ব্যবহার করে অর্থ পাচার করছে। আমি এখন তা টের পাই, কী কার্যকর হচ্ছে এবং কী হচ্ছে না। অর্থ পাচারের জন্য তারা প্রথমে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, তারপর আরও এক জায়গায়—এইভাবে জটিল প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার করেছে। কোম্পানিগুলো এত স্মার্ট হওয়ায় এত টাকা পাচার করতে পেরেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিভিন্ন ধরনের দাতার সঙ্গে কথা বলি। এত কিছুর পরও তারা ইতিবাচক। দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভালো। তারা দেশের ইতিবাচক দিকগুলোই তুলে ধরেন, যদিও সবকিছু নিখুঁত নয়।’
অর্থ উপদেষ্টা আরো বলেন, কেবল কাগজে নিরীক্ষা যথেষ্ট নয়। অর্থের উৎস ও প্রক্রিয়া যাচাইয়ের জন্য সামাজিক নিরীক্ষক ও বিশেষায়িত তদন্তকারী টিম গড়ে তোলা প্রয়োজন। সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে; তাঁদের দায়িত্বশীল, তথ্যভিত্তিক এবং গঠনমূলক রিপোর্টিং করতে হবে। তিনি ইআরএফ ইনস্টিটিউট চালুর প্রশংসা করেন এবং অনুষ্ঠান শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ইনস্টিটিউট উদ্বোধন করেন।
অর্থ সচিব বলেন, ‘গত বছর মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কারণে বাজেটের ধরন নির্ধারণ করা হয়েছিল। বিশ্লেষকদের পরামর্শে তুলনামূলক ছোট ও বাস্তবসম্মত বাজেট গ্রহণ করা হয়েছে। এটি ইতিবাচক উদাহরণ। ভবিষ্যতে ইআরএফ ইনস্টিটিউটের জন্য আরও অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’
ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা আনার জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। অডিট রিপোর্টের মাধ্যমে কর ফাঁকি দিচ্ছে এমনদের শনাক্ত করা সম্ভব। সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হলে ব্যাংকের ঋণও নিরাপদে ফেরত পাওয়া সম্ভব। করপোরেট সেক্টরে স্বচ্ছতা ও আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে আইসিএবি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজ করছে।’
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আইসিএবি ও ইআরএফ ইনস্টিটিউটের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়।