ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ ট্যারিফ কমানো হচ্ছে, যা তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কয়েক বছর পর এসেছে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, নতুন প্রস্তাবিত ট্যারিফ অনুমোদনের জন্য পরামর্শক কাউন্সিলের অর্থ বিষয়ক কমিটির সিদ্ধান্ত অপেক্ষা করছে। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড যেটিই একমাত্র ক্রেতা, ইতিমধ্যেই এই কেন্দ্রগুলোর ট্যারিফ কমানোর বিষয়ে আলোচনা করেছে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে পুনঃসংস্কার করা হবে। একজন সিনিয়র বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা জানান, বিনিয়োগের রিটার্ন ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হতে পারে এবং ট্যারিফও এ অনুযায়ী হ্রাস পাবে।
৬টি কেন্দ্রের বিবরণ: চারটি কেন্দ্র পরিচালনা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড :
- ২১০ মেগাওয়াট ময়মনসিংহ পাওয়ার প্ল্যান্ট
- ৫২.১৯৪ মেগাওয়াট কোদ্দা পাওয়ার প্ল্যান্ট
- ২৫.৫০ মেগাওয়াট রওজান পাওয়ার প্ল্যান্ট
- ১০৫ মেগাওয়াট গাজীপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট
দুটি কেন্দ্র পরিচালনা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত শক্তি খাতের একটি সংস্থা (BR PowerGen Ltd):
- ১৬৩ মেগাওয়াট মীরসরাই পাওয়ার প্ল্যান্ট
- ১৫০ মেগাওয়াট কোদ্দা পাওয়ার প্ল্যান্ট
এই কেন্দ্রগুলো মিলিয়ে মোট ৭০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। সবগুলো কেন্দ্র ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পরও এসব কেন্দ্রের ট্যারিফ কখনো কেবিনেট কমিটির অনুমোদন পায়নি, যা এই ধরনের চুক্তির জন্য বাধ্যতামূলক। বিপিডিবি শুধুমাত্র পৃথক বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয় করেছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগ বা তখনকার শক্তি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এই চুক্তিগুলো অনুমোদন করেছে কিন্তু প্রয়োজনীয় কেবিনেট অনুমোদন এড়িয়ে গেছে। ইন্টারিম প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ অডিটে এই অনিয়মের বিষয়গুলো সামনে এসেছে। এখন বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড -কে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে, কীভাবে এসব চুক্তি বৈধ রয়ে গেছে।
ট্যারিফ ও জ্বালানির তথ্য:
- হাই সালফার ফুয়েল অয়েল চালিত: প্রতি ইউনিট ২০-২২ টাকা
- কয়লা চালিত: প্রতি ইউনিট ১১-১৩ টাকা
- গ্যাস চালিত: প্রতি ইউনিট ৫-৬ টাকা
অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় অক্টোবর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত এই কেন্দ্রগুলোর সাবসিডি পরিশোধ স্থগিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সাবসিডি বিতরণের জন্য পরামর্শক কাউন্সিলের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
উপভোক্তা সংস্থা কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর শক্তি উপদেষ্টা প্রফেসর এম শামসুল আলম বলেন, “এগুলো দেশের বিদ্যুৎ ও শক্তি খাতের নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন।” তিনি একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করারও পরামর্শ দিয়েছেন। কমিশনটি অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে হবে এবং বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখবে। তিনি আরও বলেন, “শক্তি খাতের সকল স্টেকহোল্ডারকে এতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা জরুরি।”