দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহে নতুন জোয়ার বইছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট গ্রস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২৬ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
গতকাল রবিবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তথ্যমতে, দেশের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ তথ্য শুধুমাত্র আইএমএফকে জানানো হয়, প্রকাশ করা হয় না। বিশ্বমানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকা প্রয়োজন। সে তুলনায় বাংলাদেশ এখন সেই সীমার কাছাকাছি অবস্থানে আছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্সে ধারাবাহিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। জুলাইয়ে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং অক্টোবরে বেড়ে হয়েছে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চে দেশে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে। পুরো অর্থবছরে প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে ১৯১.৩৭ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২.১৩, সেপ্টেম্বরে ২৪০.৪১, অক্টোবরে ২৩৯.৫০, নভেম্বরে ২২০, ডিসেম্বরে ২৬৪, জানুয়ারিতে ২১৯, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩, মার্চে ৩২৯, এপ্রিলে ২৭৫, মে মাসে ২৯৭ এবং জুনে ২৮২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে ডলারবাজারে স্বস্তি ফিরেছে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হয়নি; বরং উল্টো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বর পাঁচটি ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ২ সেপ্টেম্বর আটটি ব্যাংক থেকে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার কেনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৩ সালের জুন শেষে দেশের রিজার্ভ ছিল ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ প্রথমবার ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে এবং একই বছরের ৮ অক্টোবর পৌঁছে ৪০ বিলিয়ন ডলারে। ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার—যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে গত দুই বছর ধরে আমদানি ব্যয় ও ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভে ধীরে ধীরে পতন ঘটে। অর্থবছরভিত্তিক রিজার্ভের চিত্র হলো—
২০১৩-১৪ সালে ২১.৫০ বিলিয়ন ডলার,
২০১৪-১৫ সালে ২৫.০২,
২০১৫-১৬ সালে ৩০.৩৫,
২০১৬-১৭ সালে ৩৩.৬৭,
২০১৭-১৮ সালে ৩২.৯৪,
২০১৮-১৯ সালে ৩২.৭১,
২০১৯-২০ সালে ৩৬.৩,
২০২০-২১ সালে ৪৬.৩৯,
২০২১-২২ সালে ৪১.৮২,
২০২২-২৩ সালে ৩১, এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।

