চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সব সূচকই ছিল নেতিবাচক। তবে মুনাফার পুনঃবিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় মোট এফডিআইয়ে গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। নতুন বিদেশি বিনিয়োগ বা ইক্যুইটির প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এপ্রিল-জুন ২০২৫ প্রান্তিকে নিট এফডিআই দাঁড়িয়েছে ৩০৩ মিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সালের একই সময়ে এটি ছিল ২৭২ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ১১.৪১ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। তবে নিট ইক্যুইটি বা নতুন বিনিয়োগ কমে ৮১ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে। গত বছরের জুনে এটি ছিল ২১৪ মিলিয়ন ডলার। এতে দেখা যায় ইক্যুইটি প্রায় ৬২ শতাংশ কমেছে। বিপরীতে নিট পুনঃবিনিয়োগকৃত আয় বেড়ে হয়েছে ১৬৮ মিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল মাত্র ৩৩ মিলিয়ন ডলার। আন্তঃকোম্পানি ঋণও কমেছে। জুন প্রান্তিকে এটি ৫৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, আগের প্রান্তিকে ছিল ৯২ মিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে থাকা অনেক কোম্পানি বিদেশি বিনিয়োগের মুনাফা দেশেই রেখেছে। তাই মোট এফডিআইতে বৃদ্ধি দেখালেও নতুন বিনিয়োগ কম এসেছে। বর্তমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নেগেটিভ ক্রেডিট রেটিংও নতুন বিনিয়োগ কম হওয়ার একটি কারণ। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশভিত্তিক সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “কোন ভরসায় বিদেশি বিনিয়োগ আসবে? ইক্যুইটির কমে যাওয়া মানে নতুন বিনিয়োগ কমে গেছে। দেশে থাকা কোম্পানিগুলোতে মুনাফা বেড়েছে এবং তা রিইনভেস্টেড হয়েছে। বিদেশে পাঠানো হয়নি।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “নির্বাচনের আগে বা পরে সহিংসতা ঘটলে বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমে যাবে। বিনিয়োগকারীরা এই ধরনের ঘটনা থেকে দূরে থাকে। তাই দেশে দরকার নিরাপদ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ।”
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “নতুন বিনিয়োগ না আসা ভালো সংকেত নয়। বিডা রোড শো করেছে, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। তবুও কিছু চড়া খরচ নতুন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বেশি। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে মিলে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই সব সমস্যার সমাধান হলে বিনিয়োগ বাড়বে।” অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দেশের ডলার সংকট নেই। ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে।
পলিসি থিঙ্ক অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান ড. মো. মাজেদুল হক বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কিছু ইতিবাচক সংকেত পাচ্ছেন। তাই তাদের মুনাফা দেশে রেখে পুনঃবিনিয়োগ করছেন। তবে আসল নতুন বিনিয়োগ কম এসেছে।” তিনি আরও বলেন, “রিজার্ভ বেড়ে যাওয়া এবং আসন্ন নির্বাচন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত। দেশের এলডিসি থেকে উত্তরণও বিনিয়োগকারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ইক্যুইটি না বাড়লে বলা যাবে না যে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে।”