এনবিআরের কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দিলেও মাঠপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী তা মানেন না। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করলে তা তদন্ত করে, নিশ্চিত হলে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এনবিআর আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করবে, জোর করে আদায় করা হবে না। মূল লক্ষ্য ব্যবসা বাড়ানো। ব্যবসা বাড়লে রাজস্ব বাড়বে—এটাই বর্তমানে নীতি।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)-এর সদস্যদের বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এসব কথা বলেন। ‘মিট দ্য বিজনেস’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তিনি। ফিকির নির্বাহী পরিচালক নূরুল কবীরের উপস্থাপনায় বিভিন্ন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা কর বেশি নেব না। যেটা আইন অনুযায়ী ঠিক আছে, সেটাই নেওয়া হবে। জোর করে কর আদায় করা হবে না। যেমন জমি দিলাম চাষের জন্য, কী পরিমাণ সার লাগবে বা শ্রমিক লাগবে, তার ওপর ভিত্তি করে যে ফসল হয়েছে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আইন, বিধি-বিধান মানলে রাজস্ব আসবে। কোনো অফিসার অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন ব্যাখ্যা করার পরও যদি কেউ তা না মানে, অন্যায়ভাবে ভ্যাট আদায় করে, তাহলে তার নির্দেশনা মানবেন না। অভিযোগ করলে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।”
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “অনেকেই বোদ্ধা, তারা কিছু বিষয়ে দ্বিমত করে। তখন সমস্যা হয়। তবে আমাদের কর্মকর্তাদের বুঝতে হবে, যারা বিদেশ থেকে ব্যবসা করতে এসেছেন, তারা শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে পারবে। রাজস্ব আদায় মূল লক্ষ্য নয়। আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়তে চাই। কোনো অবহেলা মানা হবে না।” পণ্যের ভ্যালুয়েশন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, “ভ্যালুয়েশন নিয়ে জটিলতা বাড়ানোর দরকার নেই। এনবিআর যা ন্যায্য, সেটাই নেবে। ভ্যালুয়েশন বাড়িয়ে কাস্টমস ডিউটি ধরার দরকার নেই। তবে কর ফাঁকি দিলে তা ধরতে হবে।”
সফটওয়্যার ক্রয় নিয়ে তিনি বলেন, “বিদেশি পার্টনাররা ফ্রি দিলে নিতে হবে। কিনতে চাইলে কাস্টমার ঝামেলায় পড়বে। এখানে অনেক বেশি অফিসিয়াল ঝামেলা আছে। কোনো সমস্যা হলে একজন আরেকজনের কাছে পাঠায়। এটা সংস্কৃতি হয়ে গেছে। এটি দূর করতে হবে। কেউ ভোগান্তি করলে বা বেশি কর নিলে অভিযোগ করবেন। আমরা তাদের অত্যাচার থেকে বের করতে চাই।” এনবিআরের অবৈধ লেনদেনকারী অফিসারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “দর-কষাকষি থেকে বের হতে হবে। আন্তর্জাতিক কাস্টমসে এ ধরনের অভিযোগ কম। তাহলে আমাদের দেশে কেন হবে? একই কোম্পানির একই পণ্যে ভিন্ন ভিন্ন রাজস্ব প্রয়োগ হবে কেন?”
চেয়ারম্যান বিনিয়োগকারীদের কর কমানোর প্রসঙ্গে বলেন, “যেখানে কমানোর দরকার তা কমানো হয়েছে। করপোরেট কর ৫০ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশে নেমেছে। আর কমানোর সুযোগ নেই। যেভাবে কর দিচ্ছেন, তাতে রাজস্ব বাড়বে। শুল্ক না দিলে রাজস্ব বাড়বে না।” অবৈধ লেনদেন বন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, “ক্যাশ ট্রানজেকশন অনলাইনে করলে এটি বন্ধ হবে। তবে এখনো বাড়ছে না। অনলাইনে ভ্যাট হয়েছে মাত্র ৬ লাখ, টার্নওভার ৩ কোটি থেকে ৫০ লাখ হলেও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন বাড়েনি।”
আমদানি পণ্য দ্রুত ছাড়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পণ্য ছাড়ানো। মালামাল আসার পর অ্যাসেসমেন্ট কমিটি করলে পণ্যের ডেমারেজ দিতে হয়। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারবে না। যদি কমিটি করতেই হয়, মাল আসার আগে করতে হবে। সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ডেমারেজ করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।” ই-কমার্স খাতে ভ্যাট সমন্বয় নিয়ে দারাজের এক প্রতিনিধি বলেন, “ই-কমার্সে পণ্য বিক্রির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য, কিন্তু একই পণ্য অফলাইনে বিক্রি হলে ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকা উচিত।”
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান কর্মকর্তাদের বলেন, “আমরা ডেস্কে বসে কাজ করি, ব্যবসা বুঝি না। অনলাইনে লেনদেন করলে সমস্যা হবে না। মানুষের সমস্যা থাকে, মেশিনের নয়। আজকের মতবিনিময় সভায় অনেক অজানা জানতে পারলাম। আমরা তা মানার চেষ্টা করব। আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী।”