বাংলাদেশের আর্থিক সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে অনুমোদন পেয়েছে ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’। নতুন এই অধ্যাদেশে সুরক্ষিত আমানতের সীমা এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়েছে। ফলে দেশের প্রায় ৯৩ শতাংশ আমানতকারী এখন আরও বেশি নিরাপত্তা পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে ১৯৮৪ সালে ব্যাংক আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে প্রণীত হয় ‘ব্যাংক ডিপোজিট ইন্সুরেন্স অর্ডিন্যান্স’। পরবর্তীতে ২০০০ সালে তা সংস্কার করে ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন’ নামে পুনর্গঠন করা হয়। তবে সময়ের সঙ্গে আইনে নানা সীমাবদ্ধতা দেখা দেয়। তফসিলি ব্যাংকের আমানতকারীদের সুরক্ষা থাকলেও ফাইন্যান্স কোম্পানির আমানতকারীরা এর আওতার বাইরে ছিল। ফলে এদের সঞ্চয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছিল না।
নতুন অধ্যাদেশে এই অসংগতি দূর করা হয়েছে। এখন থেকে তফসিলি ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির জন্য পৃথক ‘আমানত সুরক্ষা তহবিল’ গঠন করা হবে। দুটি তহবিল সম্পূর্ণ আলাদা থাকবে এবং একে অপরের অর্থ বিনিময়যোগ্য হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এই তহবিলগুলোর ট্রাস্টি বোর্ড হিসেবে কাজ করবে। বোর্ড তহবিলের পরিচালনা ও প্রশাসনের দায়িত্ব দেখবে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ গঠন করা হবে, যা আমানত সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। পুরোনো আইন অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত সব তফসিলি ব্যাংক স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন তহবিলের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে। নতুন ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম জমা দিয়ে সদস্যপদ নিতে পারবে।
এ ছাড়া তহবিল থেকে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর রেজল্যুশনের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। বিনিয়োগে নিরাপত্তা, বৈচিত্র্য ও তারল্য সংরক্ষণেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। সবশেষে, আমানত ফেরতের সময়সীমা ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ১৭ কার্যদিবস নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আমানতকারীরা আগের তুলনায় অনেক দ্রুত তাদের সুরক্ষিত অর্থ ফিরে পাবেন।