বাংলাদেশে ব্যবসার উদ্দেশ্যে কোনো পণ্য বিদেশ থেকে আনা হলে তা আমদানি হয়। একইভাবে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পণ্য পাঠালে তা রপ্তানি হয়। পণ্য পরিবহন হতে পারে কার্গো শিপ, প্লেন, ট্রেন বা অন্যান্য মাধ্যমে।
বাংলাদেশ থেকে আমদানি বা রপ্তানি করতে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। এজন্য দুটি আলাদা লাইসেন্স নিতে হয়—একটি আমদানি, আরেকটি রপ্তানির জন্য। এছাড়া ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হয় এবং পণ্যের মান নিশ্চিত করতে এলসি খোলা আবশ্যক। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে Chief Controller of Import & Export (CCIE) দপ্তর আমদানি ও রপ্তানির লাইসেন্স প্রদান করে। এই লাইসেন্সগুলো ইংরেজিতে বলা হয় Import Registration Certificate (IRC) এবং Export Registration Certificate (ERC)। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিছু কাগজপত্র ও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্সের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া:
- প্রথমে CCIE-এর ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে।
- অনলাইনে বা অফলাইনে সরকারি ফি ও অন্যান্য খরচ প্রদান করতে হবে।
- আবেদন জমা দেওয়ার পরে CCIE আপনার আবেদন রিভিউ করবে। সব কিছু ঠিক থাকলে অনুমোদন প্রদান করা হবে। যেকোনো ব্যবসায়ী, কোম্পানি বা পার্টনারশিপ ফার্ম যদি যোগ্য হয়, তারা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারে।
লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ট্রেড লাইসেন্স: লোকাল সরকার থেকে বৈধ ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এটি একটি ব্যবসা পরিচালনার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন।
- কোম্পানি বা পার্টনারশিপের কাগজপত্র: কোম্পানি হলে সংঘবিধি ও সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন। পার্টনারশিপ হলে পার্টনারশিপ চুক্তিপত্র ও অনুমতি পত্র।
- মালিক বা পার্টনারদের কাগজপত্র: জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, মোবাইল নং, ইমেইল এড্রেস এবং TIN।
- ট্যাক্স ও আয়কর রশিদ: প্রোপাইটর হলে মালিকের, কোম্পানি বা পার্টনারশিপ হলে প্রতিষ্ঠানের TIN এবং বিগত বছরের আয়কর রিটার্নের রশিদ জমা দিতে হবে।
- চেম্বার অফ কমার্স বা ট্রেড অর্গানাইজেশনের মেম্বারশিপ সার্টিফিকেট: আপনার পণ্যের জন্য প্রযোজ্য ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার হতে হবে। খরচ সাধারণত ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।
- ব্যাংক প্রত্যায়নপত্র: প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে এবং ব্যাংক থেকে একটি Solvency Certificate নিতে হবে।
বাংলাদেশে ব্যবসার জন্য আমদানি ও রপ্তানি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই কাজ করতে হলে সরকারের অনুমোদিত লাইসেন্স, যথাযথ ডকুমেন্ট ও নিয়মকানুন মেনে চলা বাধ্যতামূলক। CCIE-এর মাধ্যমে লাইসেন্স পাওয়া মানে আপনার ব্যবসা আইনসিদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়ে ওঠে। সব ধাপ সাবধানে অনুসরণ করলে ব্যবসা নিরাপদ ও নিয়মিত হবে। তাই নতুন ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের জন্য আমদানি-রপ্তানি লাইসেন্সের প্রক্রিয়া জানা ও সঠিকভাবে আবেদন করা অপরিহার্য।