রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ছয়টিতে প্রায় পাঁচ বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন সময় এগুলো চালুর আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তবে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় ছয়টি মিল বন্ধ রেখেই নতুন আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হচ্ছে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সূত্রে জানা গেছে, ৭ নভেম্বর থেকে ২০২৫-২৬ মৌসুমের আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হবে। বিস্তারিত সূচি অনুযায়ী:
- ৭ নভেম্বর: নাটোরের নর্থবেঙ্গল চিনিকল
- ২১ নভেম্বর: নাটোর চিনিকল
- ২৮ নভেম্বর: রাজশাহী ও জামালপুরের জিলবাংলা চিনিকল
- ৫ ডিসেম্বর: চুয়াডাঙ্গার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড ও ফরিদপুর চিনিকল
- ১২ ডিসেম্বর: ঠাকুরগাঁও ও ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকল
- ২৬ ডিসেম্বর: জয়পুরহাট চিনিকল
গত বছরের ১৫ নভেম্বর নাটোরের লালপুরে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের আখ মাড়াই উদ্বোধনের সময় শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বন্ধ থাকা ছয়টি চিনিকল চালুর আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বন্ধ মিলগুলো পুনরায় চালু করা হবে। এজন্য একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা প্রতিবন্ধকতাগুলো পর্যবেক্ষণ করছে।’
চিনি শিল্প করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন মৌসুমে বন্ধ চিনিকলগুলো চালু করতে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই অর্থ ছাড়ের অনুমতি মেলেনি। তাই ছয়টি মিল বন্ধ রেখেই মাড়াই শুরু হবে। এর ফলে গত কয়েক বছরের মতো উৎপাদন ৩০-৩৫ হাজার টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বন্ধ মিলগুলোর কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচের চাপও বেড়ে যাবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ২০২০-২১ মৌসুম থেকে কুষ্টিয়া, পাবনা, রংপুর, সেতাবগঞ্জ, পঞ্চগড় ও শ্যামপুর চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। অবশিষ্ট নয়টি মিল ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৩৮ টন আখ মাড়াই করে ৩০ হাজার ৮১৮ টন চিনি উৎপাদন করেছে। একই সময়ে কেরুর ডিস্টিলারি ইউনিটে ৬০ লাখ ২৯ হাজার প্রুফ লিটার স্পিরিট ও অ্যালকোহল এবং ২ লাখ ৩৩ হাজার প্রুফ লিটার ফরেন লিকার উৎপাদন করা হয়। এছাড়া ১২ হাজার ৬২২ লিটার ভিনেগার ও ১ হাজার ৬২০ টন জৈব সার উৎপাদন হয়েছে। একই সময়ে চিনি বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার ৬৬২ টন।
দেড় দশক আগে ১৫টি চিনিকলে প্রায় দুই লাখ টনের বেশি চিনি উৎপাদন হতো। তখন দেশের চিনি বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত মিলের সরবরাহ দাম নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। কিন্তু উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসায় খরচ বেড়ে গেছে। এর ফলে বাজারে বেসরকারি খাতের চিনি মূল্যের ওপর প্রভাব পড়ছে।
বিএসএফআইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলো ৩০ হাজার ৮১৮ টন চিনি উৎপাদন করেছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে উৎপাদন ছিল ২১ হাজার ৩১৪ টন। চলতি বছর চালু মিলগুলো থেকে ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ৫০ হাজার ও ৫৮ হাজার ৫০০ টন নির্ধারণ করা হয়েছে। সীমিত উৎপাদনের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আগের মতো বাজারে প্রভাব রাখতে পারছে না।
বিএসএফআইসি ও বিভিন্ন চিনিকলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মিলগুলোর আধুনিকায়ন ও বন্ধ মিল চালুর আশায় ছিলেন খাত সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু একাধিকবার আশ্বাস সত্ত্বেও এবারও বন্ধ মিল চালু হয়নি। বন্ধ মিলগুলো চালু করতে আখচাষীদের বকেয়া পরিশোধ, নতুন কৃষি ঋণ বিতরণ এবং বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
বিএসএফআইসির সচিব মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বন্ধ মিলগুলোতে এবারও উৎপাদন শুরু করা যায়নি। নতুন মৌসুমের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। চালু মিলগুলো আখ মাড়াই করে চিনি ও বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদন করবে।’