বৃহৎ ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠান যেমন ব্র্যাক, আশা, টিএমএসএস, বুরো বাংলাদেশ ও উদ্দীপন এখন পর্যন্ত নিজেদের পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল। তবে সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুজন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদে সদস্যসংখ্যা ৫ থেকে ১০। নতুন বিধান কার্যকর হলে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পর্ষদ। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান রয়েছে। সেখানে স্বতন্ত্র পরিচালকেরা মাসে ৫০ হাজার টাকা ভাতা পান এবং প্রতিটি সভায় অংশ নেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা করে পান। যদিও ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে তারা কতটা কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র পরিচালকেরা অনিয়মে সহায়তা করেছেন।
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান এতদিন ছিল না। সরকারের নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র পরিচালক বসবেন এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এগুলো মূলত বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও হিসেবে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো মাইক্রোফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন বা এমএফআই। তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলো মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ), যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। এর চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
এমআরএ সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগসহ নানা বিষয়ে শর্তসংবলিত আইন ও বিধিমালার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। মূলত এই খসড়ার লক্ষ্য এমআরএর ক্ষমতা বাড়ানো এবং ক্ষুদ্রঋণদাতাদের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করা। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই নিয়মকানুন প্রণয়নে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সমর্থন রয়েছে। তবে তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে। গত রাতে মুঠোফোনে পাঠানো একটি খুদে বার্তায় তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে এখন মন্তব্য করতে পারছেন না। এমআরএ ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি কী আলোচনা করেছে, তা তাঁকে জানতে হবে।
এদিকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “বাস্তব অবস্থা বুঝে না এমন প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ আরও বেড়ে যাবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কাজের পরিবেশও নষ্ট হতে পারে।”
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালক: কে বসবে এবং কিভাবে:
এমআরএর ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটি দেশে ৭২৪টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি ১৫ লাখ। খাতে মোট কর্মীসংখ্যা ২ লাখ ২৩ হাজার। প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। ক্ষুদ্রঋণ খাতে আদায় না হওয়া ঋণের হার খুবই কম।
এমআরএর খসড়া বিধি অনুযায়ী, স্বতন্ত্র পরিচালক বসবে শুধু মাঝারি ও বড় প্রতিষ্ঠানে। অর্থাৎ যাদের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার বেশি। তবে কয়টি প্রতিষ্ঠানের ঋণ এই সীমার বেশি, তা সম্পর্কে এমআরএর কাছে স্পষ্ট তথ্য নেই। কর্মকর্তাদের ধারণা অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১০০টি প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত ঋণ ৫০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।
স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে এমন: প্রতিষ্ঠানগুলো এমআরএ-কে চারজনের নাম প্রেরণ করবে। এর মধ্যে দুজনের ব্যাপারে অনাপত্তিপত্র দেবে এমআরএ। তবে কিছু শর্ত রয়েছে। কোনো স্বতন্ত্র পরিচালক পর্ষদ সদস্যের সঙ্গে পিতা-মাতা, সহোদর, পুত্র-কন্যা বা স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কযুক্ত হতে পারবেন না। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান মন্তব্য করেন, “বাস্তব অবস্থা বুঝে না এমন প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ আরও বেড়ে যাবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কাজের পরিবেশও নষ্ট হতে পারে।”
ক্ষুদ্রঋণ খাতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ, উদ্যোগ ও বিতর্ক:
ক্ষুদ্রঋণ খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার উদ্দেশ্যে এমআরএর পর্ষদ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি এসেছে। এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, “স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোই করবে। এমআরএ কেবল নিয়মকানুন ঠিক করতে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে জড়িত। কেউ যদি বারবার অযোগ্য ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করে, সরকার তখন বাধ্য হয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করবে। সরকারের হস্তক্ষেপের প্রশ্ন এখানে প্রাসঙ্গিক নয়।” অধ্যাপক হেলাল আরও বলেন, “ব্যাংকের মতো ক্ষুদ্রঋণ খাতে পরিবারতন্ত্র জেঁকে বসেছে। সরকার এই খাত করমুক্ত রেখেছে প্রান্তিক মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান অযৌক্তিকভাবে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে। এ ধরনের কাজ আর চলতে দেওয়া ঠিক হবে না।”
এমআরএর উদ্যোগে আপত্তি জানিয়েছে ক্ষুদ্র অর্থায়ন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একমাত্র নেটওয়ার্কিং সংস্থা ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিডিএফ)। ফোরামটি উদ্যোগটিকে ‘ক্ষতিকর, বেআইনি ও অপ্রয়োজনীয়’ আখ্যা দিয়ে ৬ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
এদিকে ইনাফি (ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব অল্টারনেটিভ ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস), ক্ষুদ্রঋণদাতা এনজিওগুলোর সংগঠন, উদ্যোগটি হুবহু বাস্তবায়ন না করার দাবি জানিয়েছে। ইনাফির সদস্যদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, “কিছু ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক ও সিইও নিয়োগে এমআরএর অনুমোদনের শর্ত ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হবে না, তা আমরা কীভাবে বুঝব? ব্যাংক খাতে এত বছর ধ্বংসলীলা হয়েছে। এমআরএর এ উদ্যোগ এখন ভালো থাকা ক্ষুদ্রঋণ খাতের জন্যও অশুভ বার্তা বয়ে আনতে পারে।”
স্বতন্ত্র পরিচালক: যোগ্যতা, শর্ত ও সম্ভাব্য প্রভাব:
খসড়া বিধি অনুযায়ী, স্বতন্ত্র পরিচালক হতে হলে কাউকে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ বা স্বশাসিত সংস্থায় কমপক্ষে ১০ বছরের প্রথম শ্রেণির চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রাধান্য দেওয়া হবে তাদেরকে, যাঁদের আর্থিক খাতের কাজের অভিজ্ঞতা আছে। বয়স হতে হবে ৩৫ থেকে ৭০ বছর। তবে একই ব্যক্তি একাধিক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে মূলত সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে বসানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। অবসরের পর তাঁদের পুনর্বাসনের পথও খোলা হচ্ছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে সরকারি কর্মকর্তারা পর্ষদে ছিলেন। কিন্তু ঋণের নামে লুটপাট ঠেকাতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। বরং ব্যাংক থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও আছে। এমআরএ বলছে, ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তি, জালিয়াতি বা আর্থিক অপরাধে জড়িত ব্যক্তি এবং খেলাপি ব্যাংক সদস্য স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ সভায় স্বতন্ত্র পরিচালকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। চলমান মেয়াদে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিকে এমআরএ চাইলে পরবর্তী মেয়াদেও নিয়োগ দিতে পারবে।
এমআরএর এ উদ্যোগে আপত্তি জানিয়েছে ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিডিএফ)। ফোরাম উদ্যোগটিকে ‘ক্ষতিকর, বেআইনি ও অপ্রয়োজনীয়’ আখ্যা দিয়ে ৬ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। ইনাফি বলছে, বর্তমানে সাধারণ সদস্যদের মাধ্যমে নির্বাচিত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ সদস্যরা স্বতন্ত্র। নতুন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর অরাজনৈতিক ও স্বতন্ত্র চরিত্র ক্ষুণ্ণ করতে পারে। এতে রাজনৈতিক প্রভাব, চাকরি বা গাড়ি ব্যবহারের তদবির, ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য সামাজিক খাতের ব্যয় ও নিজের পছন্দের ব্যাংকে আমানত রাখার মতো অনুচিত তদবির বেড়ে যেতে পারে।
সিডিএফের চেয়ারম্যান ও পপির নির্বাহী সচিব মুরশেদ আলম সরকার বলেন, “আইনের শিকল নয়, প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্যমী করে গড়ে তোলার নীতি প্রয়োজন।” ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, “কিছু ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক ও সিইও নিয়োগে এমআরএর শর্ত ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।”
সিইও নিয়োগে নতুন শর্ত: এমআরএর প্রস্তাব ও বিতর্ক:
বিদ্যমান এমআরএ আইন, ২০০৬ অনুযায়ী প্রতিটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বা নির্বাহী পরিচালক (ইডি) নিয়োগ করে। এবার নতুন শর্ত যুক্ত করে এমআরএ বলছে, সিইও বা ইডি নিয়োগের এক মাসের মধ্যে এমআরএর অনাপত্তিপত্র নিতে হবে।
শর্ত অনুযায়ী, ৪০ বছরের কম বয়সী কেউ সিইও হতে পারবেন না এবং ৬৫ বছর বয়সে পৌঁছালে পদে থাকতে পারবেন না। নিয়োগ মেয়াদ পাঁচ বছর, তবে পুনর্নিয়োগ পাওয়া যাবে। সিইও দায়িত্ব পালনকালে অন্য কোনো ব্যবসা বা পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। পর্ষদে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যও থাকতে পারবে না।
সিইও হতে হলে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা, যার অন্তত পাঁচ বছর হবে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বাধ্যতামূলক। অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স, ব্যাংকিং বা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকলে তা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে গণ্য হবে। বর্তমানে এই ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রতিষ্ঠাতা কর্মক্ষম থাকলে ৭৫ বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানতে থাকতে পারবেন। ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিডিএফ) লিখিত মতামত দিয়েছে, সিইও নিয়োগের পরে পুনরায় এমআরএর অনাপত্তি নেওয়ার প্রস্তাব অযৌক্তিক। তাদের মতে, সিইও হওয়ার জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীর প্রয়োজন নেই; স্নাতক পাসই যথেষ্ট।
এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য বিষয়গুলোতে সম্মত হয়েছে। তবে একাধিক এনজিও বলছে, সব বিষয়ে তারা সম্মতি দেয়নি।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মন্তব্য করেন, “ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বকীয়তা নষ্ট করা যাবে না। তবে এখানে সুশাসন, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা জরুরি। অন্য খাতের মতো অনিয়ম-দুর্নীতি আছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কঠোর করার নীতি প্রয়োজন। ব্যাংক খাতে যেখানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে ক্ষুদ্রঋণ খাতে একই মডেল কতটা কাজে দেবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।”
ক্ষুদ্রঋণ খাতে স্বতন্ত্র পরিচালক: কার্যকারিতা ও সম্ভাব্য প্রভাব:
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকেরা মুনাফার ভাগ পান না। তাঁরা প্রতিষ্ঠানের মালিকও নন। অন্যদিকে ব্যাংকের পরিচালকরা মূলত ব্যাংকের মালিক (স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া) এবং মুনাফার ভাগ পান। এছাড়া ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারে না, যেখানে ব্যাংক মানুষের আমানতের টাকায় চলে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ব্যাংক ও এনজিওর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার ধরন একইভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তাই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি বিতর্কিত।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বকীয়তা কোনোভাবেই নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না। তবে সুশাসন, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা অপরিহার্য। অন্য খাতের মতো এখানে ও অনিয়ম-দুর্নীতি আছে। তাই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কঠোর করার নীতি প্রয়োজন। ব্যাংক খাতে যেখানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে ক্ষুদ্রঋণ খাতে একই মডেল কতটা কাজে দেবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।” তিনি আরও বলেন, “স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দীর্ঘ মেয়াদে দলীয় রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। এ খাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে অসুস্থ প্রতিযোগিতার ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।”

