যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব কাটাতে ইউরোপে নতুন বাজার খুঁজছেন ভারতের টেক্সটাইল রপ্তানিকারকরা। মার্কিন বাজারে দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের পর, তারা শুধু নতুন ইউরোপীয় ক্রেতা খুঁজছেন না, বরং বিদ্যমান মার্কিন ক্রেতাদের জন্য বিশেষ ছাড়ও দিচ্ছেন। বিষয়টি জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, ভারতের টেক্সটাইল খাতের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে।
গত আগস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করেন। এতে পোশাক, গয়না থেকে শুরু করে চিংড়ি পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতে প্রভাব পড়েছে। মুম্বাইয়ের এক পোশাক রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, তার প্রতিষ্ঠান ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বহুমুখী রপ্তানি বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, ইউরোপের সঙ্গে দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি হলে ভারতের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে উভয়পক্ষ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। গত অর্থবছরে দুই পক্ষের বাণিজ্য ছিল ১৩৭.৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত এক দশকে প্রায় ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতীয় রপ্তানিকারকদের মতে, ইউরোপীয় বাজারের জন্য কঠোর রাসায়নিক মানদণ্ড, পণ্যের লেবেলিং এবং নৈতিক উৎস নিশ্চিতকরণের নিয়ম মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। এই মানদণ্ড পূরণে উৎপাদন স্থাপনাগুলোর আধুনিকায়ন করছে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। ক্লোদিং ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা রাহুল মেহতা বলেন, রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে আগ্রহী। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজার ছিল, যেখানে মোট রপ্তানির প্রায় ২৯ শতাংশ গেছে।
মুম্বাইভিত্তিক ক্রিয়েটিভ গ্রুপের চেয়ারম্যান বিজয় কুমার আগারওয়াল জানিয়েছেন, মার্কিন ক্রেতাদের ধরে রাখতে কিছু রপ্তানিকারক ইতোমধ্যেই বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছেন। তার কোম্পানির ৮৯ শতাংশ রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যায়। তিনি আরও বলেন, শুল্ক বৃদ্ধি থাকলে কোম্পানির ১৫ হাজার কর্মীর মধ্যে ৬ থেকে ৭ হাজারকে ছাঁটাই করতে হতে পারে। এছাড়া আগামী ছয় মাসের মধ্যে উৎপাদন কারখানা ওমান বা প্রতিবেশী বাংলাদেশে স্থানান্তরের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি ভারতের টেক্সটাইল খাতকে নতুন বাজারে মনোনিবেশ করতে বাধ্য করেছে, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্ভাব্য মূল বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।