Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Wed, Oct 15, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বানিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • প্রযুক্তি
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » শাখাবিহীন ডিজিটাল ব্যাংক অর্থনীতিতে নয়া দিগন্ত না চ্যালেঞ্জ?
    অর্থনীতি

    শাখাবিহীন ডিজিটাল ব্যাংক অর্থনীতিতে নয়া দিগন্ত না চ্যালেঞ্জ?

    কাজি হেলালOctober 15, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন এক নতুন যুগের দোরগোড়ায়। বিশ্বজুড়ে আর্থিক প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের ধারায় এবার আমাদের দেশেও সূচনা হতে যাচ্ছে শাখাবিহীন ডিজিটাল ব্যাংক, যেখানে সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন হবে সম্পূর্ণ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে, কোনো শাখা বা শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের নীতিমালা প্রকাশ করেছে এবং কয়েকটি প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সরকারের লক্ষ্য স্পষ্ট, তা হলো অর্থনীতিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করা, নগদ নির্ভরতা কমানো এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকেও ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা।

    তবে প্রশ্ন উঠছে এই উদ্যোগ কি সত্যিই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে “নয়া দিগন্ত” উন্মোচন করবে, নাকি এটি হয়ে উঠবে এক নতুন “চ্যালেঞ্জ”? বাস্তবতা বলছে আমাদের আর্থিক খাতের প্রযুক্তিগত অবকাঠামো এখনও অসম; সাইবার নিরাপত্তা ও গ্রাহক আস্থার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। পাশাপাশি নগদ অর্থের প্রতি মানুষের দীর্ঘদিনের নির্ভরতা এবং ডিজিটাল দক্ষতার ঘাটতি এই পরিবর্তনের পথে বড় বাঁধা হতে পারে।

    তবু আশাবাদের যথেষ্ট কারণ আছে। বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইতোমধ্যেই দেশের লাখো মানুষের হাতে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিয়েছে, যা প্রমাণ করে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা বাস্তব এবং কার্যকর। সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও দক্ষ নিয়ন্ত্রণ থাকলে শাখাবিহীন ব্যাংক এই অগ্রযাত্রাকে আরও সুসংহত করতে পারবে।

    সত্য বলতে শাখাবিহীন ব্যাংক একইসাথে নতুন দিগন্ত ও চ্যালেঞ্জ দুটোই। এটি যেমন ব্যাংকিং সেবাকে করবে আরও সহজলভ্য, দ্রুত ও কম খরচে প্রাপ্তিযোগ্য; তেমনি এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডেটা নিরাপত্তা ঝুঁকি, সাইবার অপরাধের আশঙ্কা ও প্রযুক্তি-নির্ভরতার চ্যালেঞ্জ। অর্থাৎ এই উদ্যোগ সফল করতে হলে শুধু প্রযুক্তি নয়; প্রয়োজন আস্থা, দক্ষতা এবং সঠিক নীতিনির্ধারণ।

    ডিজিটাল ব্যাংক কী?

    ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস খুব একটা নতুন নয়। এর সূচনা ঘটে ১৯৬০-এর দশকে, যখন ব্যাংকগুলো প্রথমবারের মতো স্বয়ংক্রিয় টেলার মেশিন বা এটিএম চালু করে এবং ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। এরপর ১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেটের বিকাশের সঙ্গে অনলাইন ব্যাংকিং জনপ্রিয় হতে থাকে, আর ২০০০ সালের পর স্মার্টফোন ও ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তির বিস্তারে ব্যাংকিং সেবা মানুষের হাতে চলে আসে। বর্তমানে বিশ্বের ৬০ শতাংশেরও বেশি গ্রাহক মোবাইল বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যাংকিং করেন, যা ব্যাংকিং সেবার সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করেছে।

     এই ধারাবাহিক রূপান্তরের সর্বশেষ ধাপ হলো ডিজিটাল ব্যাংক। এটি এমন এক ব্যাংক, যার কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বা সিডিএম (নগদ জমা মেশিন) থাকবে না। সব সেবা পাওয়া যাবে শুধুমাত্র ডিজিটাল মাধ্যমে ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ বা অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। গ্রাহক যেকোনো স্থান থেকে ২৪ ঘণ্টা যেকোনো সময় ব্যাংকিং সেবা নিতে পারবেন। হিসাব খোলা, টাকা স্থানান্তর, বিল পরিশোধ বা ঋণ আবেদন সবকিছুই সম্পূর্ণ অনলাইনে করা সম্ভব হবে, কোনো ব্যাংক শাখায় না গিয়েই। গ্রাহকদের সুবিধার জন্য ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চ্যুয়াল কার্ড, কিউআর কোড, ডিজিটাল ওয়ালেট ও এপিআই (API) সংযোগের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে। নগদ অর্থের প্রয়োজন হলে গ্রাহক অন্য ব্যাংকের এটিএম বা এজেন্ট সেবার মাধ্যমে তা তুলতে পারবেন।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক বড় বা মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না, তবে ক্ষুদ্রঋণ বা ছোট ব্যবসায়িক ঋণ প্রদান করতে পারবে। এছাড়া কোনো ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুমতি থাকবে না। বিকাশ, নগদ বা রকেটের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলো বর্তমানে ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ দিলেও, এগুলো পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক নয়। ডিজিটাল ব্যাংক হবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা ঐসব সেবাকে একত্রিত করে সম্পূর্ণ ব্যাংকিং কার্যক্রম অনলাইনে নিয়ে আসবে।

    ডিজিটাল ব্যাংকিং কেবল একটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নয়; এটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, দক্ষতা ও স্বচ্ছতার নতুন দিগন্ত। সরকারের লক্ষ্য একটি স্মার্ট, নগদহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গঠন করা। যেখানে শহর থেকে গ্রাম সবখানের মানুষই ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা পাবে। তাই বলা যায় ডিজিটাল ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে এক নতুন যুগে নিয়ে যাওয়ার পথপ্রদর্শক হতে পারে।

    বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ব্যাংকের প্রসার ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: বিশ্বের অনেক দেশে প্রথাগত ব্যাংকের পাশাপাশি ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছে দ্রুত ও সহজভাবে সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০০-এর বেশি ডিজিটাল ব্যাংক কার্যক্রম চালাচ্ছে।

    যুক্তরাজ্যভিত্তিক রেভোলুট (Revolut) আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, স্টক ট্রেডিং এবং একাধিক মুদ্রায় হিসাব খোলার সুবিধা প্রদান করে। জার্মানভিত্তিক এনটুসিক্স (N26) তার মাশুলবিহীন হিসাব খোলার সুবিধার কারণে ইউরোপজুড়ে জনপ্রিয়। লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম ডিজিটাল ব্যাংক নিওব্যাংক (Neobank) ব্রাজিল, মেক্সিকো ও কলম্বিয়ায় ক্ষুদ্রঋণ, সঞ্চয়ী হিসাব ও ক্রেডিট কার্ড সেবা দিয়ে কোটি কোটি গ্রাহকের কাছে পৌঁছেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কাকাওব্যাংক (KakaoBank) ‘কাকাওটক’ মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক গ্রাহককে যুক্ত করেছে এবং আমানত, ঋণ, ক্রেডিট কার্ড ও আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্সসহ সব ধরনের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে। এই উদাহরণগুলো প্রমাণ করে ডিজিটাল ব্যাংক শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়; বরং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে।

    বাংলাদেশেও শাখাবিহীন বা ডিজিটাল ব্যাংক এখন একটি উদীয়মান খাত, যা দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করেছে এবং লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়ায় গতি আনতে নতুন করে আবেদনপত্র আহ্বান করেছে। প্রাথমিকভাবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে গ্রাহক ও উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

    ২০২৩ সালে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নীতিমালা কার্যকর হলেও পূর্বের ধীর লাইসেন্স প্রক্রিয়া ও অস্পষ্টতার কারণে সমালোচনা উঠেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এবার আরও স্বচ্ছ ও কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়া চালু করেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৩১ ধারা অনুযায়ী উদ্যোক্তাদের আবেদনপত্রের সঙ্গে ৫ লাখ টাকা প্রসেসিং ফি ও প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে। আবেদন সরাসরি বা ই-মেইলের মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে।

    নতুন নির্দেশনায় ন্যূনতম পেইড-আপ ক্যাপিটালের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির (IPO) শর্তও রাখা হয়েছে। ফলে প্রযুক্তিনির্ভর ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। তবে লক্ষ্য স্পষ্ট- প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যাংকিং সুবিধা বাড়ানো, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পাবে এবং কর্মসংস্থান ও খাদ্যনিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।

    বর্তমানে ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবহারের হার দ্রুত বাড়ছে। মোবাইল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে টাকা জমা, ঋণ গ্রহণ, বিল পরিশোধ এবং প্রবাসী আয় গ্রহণ, সবকিছুই এখন হাতের নাগালে। তবুও নগদ অর্থের প্রতি মানুষের অভ্যস্ততা পুরোপুরি কমেনি; অনেকেই এখনও প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেমকেই বেশি নিরাপদ মনে করেন। এর ফলে ডিজিটাল রূপান্তর ধীরে হলেও ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে।
    এদিকে ফিনটেক প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এই নতুন খাতে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ফলে প্রতিযোগিতা বাড়ছে এবং ব্যাংকিং খাতের রূপ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে, আগামী বছর থেকেই বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ শাখাবিহীন ডিজিটাল ব্যাংক কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

    ২০২৪ সালে বাংলাদেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) খাতে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ দশমিক ৩৭ লাখ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৩৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বা ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩ দশমিক ৫২ লাখ কোটি টাকা। এই তথ্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশের মানুষ দ্রুত ডিজিটাল আর্থিক সেবার দিকে ঝুঁকছে এবং দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে নগদহীন লেনদেনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

    বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করেছে এবং নতুন করে লাইসেন্সের আবেদন আহ্বান করেছে। ২০২৩ সালে প্রণীত প্রাথমিক নীতিমালায় ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২৫ কোটি টাকা। পরে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পরিমাণ বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এই মূলধন সম্পূর্ণভাবে সাধারণ শেয়ারের মাধ্যমে গঠিত হতে হবে। সময়ের সঙ্গে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পরিবর্তিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে নতুন আবেদন গ্রহণ ও অনুমোদন প্রদান করেছে।

    সাম্প্রতিক সময়ে কিছু প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ব্যাংক বা ডিজিটাল ব্যাংকিং উইন্ডো খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়েছে। এছাড়া কোরি, বিকাশ, ডিজি টেন ও ডিজিটাল ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইন্ডো চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জাপান বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক, নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক এবং স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক নামের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য বিবেচনায় রয়েছে।

    উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তা ও জনগণের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অভ্যস্ততা দেশের ব্যাংকিং খাতকে এক নতুন যুগে নিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল ব্যাংক ও এমএফএস খাতের এই দ্রুত সম্প্রসারণ অর্থনীতিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ এবং প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলছে। যদিও সাইবার নিরাপত্তা, গ্রাহক আস্থা এবং উচ্চমূল্যের লেনদেন নিয়ন্ত্রণের কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে, তবুও ডিজিটাল ব্যাংকিং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বাস্তব পরিবর্তনের সূচনা করেছে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার এই সেবার মান আরও উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    শাখাবিহীন ডিজিটাল ব্যাংক কেন ‘নতুন দিগন্ত’ হওয়ার সম্ভাবনা: ডিজিটাল ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এটি কেবল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, বরং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থার দিকে বড় পদক্ষেপ। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। গ্রামের রিকশাচালক থেকে শুরু করে শহরের ছোট ব্যবসায়ী; প্রায় সবাই এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করছে। এই বাস্তবতা ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের জন্য বিশাল সুযোগ তৈরি করেছে, যেখানে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে যেতে পারে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামেও।

    ডিজিটাল ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এখনো দেশে বহু মানুষ প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে। ডিজিটাল ব্যাংকের মাধ্যমে নারী, নিম্ন আয়ের মানুষ, এমনকি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও সহজে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসতে পারবে। অনলাইন ভিত্তিক এই ব্যাংক ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে, ফলে গ্রাহকরা যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে লেনদেন করতে পারবেন, যা প্রচলিত ব্যাংকের সময়সীমার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে।

    ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালন ব্যয়ও কমিয়ে আনে। শাখা বা অফিস পরিচালনার প্রয়োজন না থাকায় ব্যাংকের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। এতে গ্রাহকরা কম ফি, ভালো সুদের হার এবং দ্রুত সেবা পাওয়ার সুযোগ পান। কাগজবিহীন ও স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার কারণে এটি পরিবেশবান্ধবও বটে। নিরাপত্তার দিক থেকেও ডিজিটাল ব্যাংক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ও প্রতারণা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা গ্রাহকের অর্থ ও তথ্য সুরক্ষিত রাখে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চালিত চ্যাটবট ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ২৪ ঘণ্টা গ্রাহক সহায়তা প্রদান করতে পারে, যা গ্রাহক অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে।

    প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কারণে ডিজিটাল ব্যাংক একক অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে একাধিক আর্থিক সেবা একত্রে দিতে সক্ষম। ওপেন এপিআই (Open API) ব্যবস্থার ফলে গ্রাহকরা একটি প্ল্যাটফর্মেই আমানত, ঋণ, বিনিয়োগ ও বিল পরিশোধের সব সেবা নিতে পারবেন। একই সঙ্গে তারা নিজেদের লেনদেন ও ব্যয়ের তথ্য রিয়েল টাইমে দেখতে পারবেন, যা আর্থিক স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াবে। ডিজিটাল ব্যাংক নতুন অর্থনৈতিক সুযোগও তৈরি করবে। এটি উদ্যোক্তা ও তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের পথ খুলে দিতে পারে; বিশেষত ফিনটেক, সফটওয়্যার উন্নয়ন, সাইবার নিরাপত্তা ও গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রে।

    বাংলাদেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) যেমন: বিকাশ, নগদ ও রকেট ইতিমধ্যেই ডিজিটাল লেনদেনের অভ্যাস তৈরি করেছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি আমানত গ্রহণ বা ঋণ বিতরণের অনুমতি পায় না। ডিজিটাল ব্যাংক সেই সীমাবদ্ধতা দূর করবে। বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠান যদি ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পায়, তবে তারা সরাসরি গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদান করতে পারবে। বর্তমানে বিকাশের ৮ কোটিরও বেশি গ্রাহক রয়েছে, যা ব্যবহার করে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং সেবা দেওয়া সম্ভব।

    সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার হারও বেড়েছে। ডিজিটাল ব্যাংক চালু হলে প্রবাসী আয় সরাসরি গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে। ফলে খরচ কমবে, সময় বাঁচবে এবং প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ডিজিটাল ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে; যেখানে প্রযুক্তি, দক্ষতা ও অন্তর্ভুক্তি মিলিত হয়ে গড়ে তুলবে স্মার্ট, স্বচ্ছ ও টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থার এক নতুন দিগন্ত।

    চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি– কেন ‘চ্যালেঞ্জ’ হতে পারে?

    ডিজিটাল ব্যাংকিং বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে নতুন সম্ভাবনার সঙ্গে নতুন চ্যালেঞ্জও নিয়ে এসেছে। প্রযুক্তিগত সুবিধা থাকলেও এই সিস্টেম বেশ কিছু ঝুঁকির মুখোমুখি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আছে সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য সুরক্ষা। হ্যাকিং, ফিশিং বা ম্যালওয়্যার আক্রমণের মাধ্যমে গ্রাহকের সংবেদনশীল তথ্য এবং অর্থ চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে যখন প্রযুক্তিগত অবকাঠামো দুর্বল বা অপর্যাপ্ত।

    প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতাও ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য বড় বাঁধা। পুরনো সিস্টেমের সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি যেমন: ক্লাউড কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এপিআই একীভূত করা কঠিন হতে পারে। দেশের অনেক ব্যাংকের আইটি অবকাঠামো এখনও উন্নত নয়, যা সেবার গুণগত মান ও নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে। গ্রাহকের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। অনেকে অনলাইন লেনদেনকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন এবং প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের তুলনায় ডিজিটাল ব্যাংকে আস্থা রাখতে দ্বিধা বোধ করেন। বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিক বা যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে অভ্যস্ত নন, তারা ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবহারে সমস্যার সম্মুখীন হন।

    আইনি ও প্রবিধানিক বাঁধাও কম নয়। ডিজিটাল ব্যাংককে অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (AML) আইন, নো ইওর কাস্টমার (KYC) নিয়মাবলী এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক নীতি মেনে চলতে হয়; যা ব্যয়বহুল ও জটিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ওপর নজরদারি বাড়াচ্ছে, ফলে কমপ্লায়েন্সের চাপ আরও বেড়েছে।

    লাভজনকতা ও প্রতিযোগিতার চাপে ডিজিটাল ব্যাংকগুলো হিমশিম খায়। গ্রাহক অধিগ্রহণের উচ্চ খরচ, প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের চাপ এবং ফিনটেক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা ব্যাংকগুলোর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো অনলাইন জালিয়াতি ও সাইবার অপরাধীদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, যা গ্রাহকের তথ্য ও আর্থিক নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ায়।

    প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাও উল্লেখযোগ্য। নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ, স্মার্টফোন বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা না থাকায় অনেক গ্রাহক এই ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুবিধা নিতে পারছেন না। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকা ও বয়স্ক নাগরিকরা এই ডিজিটাল রূপান্তর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শাখা বা ব্যক্তিগত উপস্থিতির অভাবে গ্রাহকরা ব্যক্তিগতকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন, যা প্রথাগত ব্যাংকিংয়ে সহজে পাওয়া যায়।
    অতএব, ডিজিটাল ব্যাংকিং একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা রাখলেও এর সঙ্গে নানা ধরনের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জও জড়িত। শক্তিশালী প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো, গ্রাহক প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এই খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করা কঠিন।

    শাখাবিহীন বা ডিজিটাল ব্যাংকিং বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে এক নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির সাহায্যে আর্থিক সেবা এখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা সেবা, স্বল্প খরচে লেনদেন এবং সহজলভ্যতার কারণে এটি অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে, উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করতে সক্ষম।

    তবে এই নতুন ধারা ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জবিহীন নয়। সাইবার নিরাপত্তা, গ্রাহকের আস্থা, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং নিয়মকানুনে কঠোরতা ডিজিটাল ব্যাংকিংকে পরীক্ষার মুখে রাখছে। শাখাহীন ব্যাংক যতটা সম্ভাবনার প্রতীক, ততটাই সতর্কতারও দাবি রাখে। সুতরাং ডিজিটাল ব্যাংক অর্থনীতিতে সত্যিই একটি নয়া দিগন্তের সূচনা করতে পারে; যদি এটি প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং স্বচ্ছ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে পরিচালিত হয়। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও উদ্ভাবনের এই যাত্রায় সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নয়; বরং দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার এবং সুযোগের নতুন দিগন্তের প্রতীক।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    প্রযুক্তি

    আইফোন বিক্রির মন্দাভাব কাটিয়ে নতুন উচ্চতায় অ্যাপল

    October 15, 2025
    অর্থনীতি

    পরিবেশবান্ধব পোশাক শিল্পে বিশ্বে শীর্ষে বাংলাদেশ

    October 15, 2025
    অর্থনীতি

    আইএমএফ শর্ত কঠোর হলে ঋণ নেবে না বাংলাদেশ

    October 15, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.