চট্টগ্রাম বন্দরের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে এবং আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থাপনা আনতে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এটি কোনো বিদেশি অপারেটরকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নয় বরং বন্দরের কার্যক্রম দ্রুততর করার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ (১৫ অক্টোবর) থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন শুল্ক হার কার্যকর হয়েছে। বন্দরের পরিষেবা খরচ এক লাফে গড়ে ৪১ শতাংশ বেড়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনার খরচ কম হতে পারে কিন্তু পণ্য পৌঁছাতে সময় বেশি লাগছে। পোর্টে যানজট ও ডেমারেজ ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পোর্ট চার্জ বেশি নয় কিন্তু কার্যক্রম দ্রুত হয়। গার্মেন্টস শিল্পের উদ্যোক্তারা বলেন, পণ্য দ্রুত পৌঁছায় না। দ্রুত ডেলিভারি এবং শিপিং খরচ কমানো অর্থনীতির জন্য লাভজনক। কিছু ক্ষেত্রে দাম বেশি দিতে হতে পারে কিন্তু তা কার্যকর সেবার বিনিময়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্দরে দ্রুতগতির উন্নত সেবা নিশ্চিত করতেই শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। যারা দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য সার্ভিস চায়, তাদের জন্য মান উন্নত করা জরুরি। এজন্য আমরা নতুন একটি টার্মিনাল তৈরি করছি। খরচ অনুযায়ী সঠিক সার্ভিস চার্জ নেওয়াই যুক্তিসঙ্গত। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সঠিক চার্জ নেওয়া অপরিহার্য।’
বর্তমান সমালোচনা হচ্ছে, সরকার বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দেওয়ার জন্য শুল্ক পরিবর্তন করছে। তবে অর্থ সচিব ড. মোহাম্মদ খায়েরুজ্জামান মজুমদার এটি নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, ‘শুল্ক বাড়ানো হয়নি বরং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে দীর্ঘ সময় পর সমন্বয় করা হয়েছে। বর্তমান শুল্ক ৩০ বছর আগে প্রণীত হার অনুযায়ী আপগ্রেড করা হয়েছে। এটি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেবে এবং সার্ভিস মান উন্নত করবে। ফি বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগে সেবা মান নিশ্চিত হবে।’
শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে পণ্য খালাসে কোনো অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘যেসব কন্ট্রাক্ট করা হয়েছে, তা মানা হচ্ছে। অতিরিক্ত পেমেন্ট বা বিনা খরচে অন্য সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। ভালো মানের সেবা পেতে হলে কিছুটা বেশি ফি নেওয়াই বাস্তব। এটি সমস্যা নয় বরং সার্ভিসের মান নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন।’
তবে ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘উপদেষ্টা বলেছেন শুল্ক বাড়লে দ্রুত সেবা কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। কিন্তু কিভাবে তা নিশ্চিত করবেন? আমাদের উদ্বেগ দুর্নীতিবাজ কাস্টম কর্মকর্তাদের কারণে ধীরগতির। তারা টাকা পেলে দ্রুত খালাস দেয়, আর না দিলে দীর্ঘ করার উপায় খুঁজে বের করে। সরকার নিশ্চিত করতে হবে, শুল্ক বাড়ানো হলেও দুর্নীতি থাকবে না এবং কার্যক্রম সময়মতো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ৪০ বছরে কেন শুল্ক বাড়ানো হয়নি? হঠাৎ একবারে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি শিল্পের জন্য বোঝা। ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হলে শিল্প ও সরকারের জন্য ভালো হতো। আমাদের দাবি, বর্ধিত শুল্কের পরও শিল্পের কার্যক্রমে কোনো বাধা তৈরি না হোক।’