অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রতিশ্রুত ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে যদি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নতুন বা কঠোর কোনো শর্ত আরোপ করে, তাহলে সরকার দ্বিতীয়বার ভাববে ঋণ নেবে কি না। বরং তখন বিকল্প উৎস খুঁজে নেওয়ার দিকে নজর দেওয়া হবে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে অনেক বেশি স্থিতিশীল।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) আইএমএফের বার্ষিক সভার দ্বিতীয় দিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেট সহায়তা নেওয়া হবে কি না—এখন তা চূড়ান্ত নয়। তবে আইএমএফের শর্ত দেশের জন্য অনুকূল না হলে সরকার বিকল্প উৎস থেকে সহায়তা নেওয়ার দিকেই মনোযোগ দেবে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিকল্প বাজেট সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এডিবি, এআইআইবি-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি যোগ করেন, আমরা বর্তমানে আইএমএফের চলমান প্রোগ্রামে আছি, তবে নতুন প্রোগ্রামে যোগ দেব কি না, তা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।
করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক ধাক্কায় ২০২২ সালে রিজার্ভের ধারাবাহিক পতনের পর তৎকালীন সরকার আইএমএফের সাহায্য নেয়। তখন ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি হয়। পরে ২০২৪ সালের গণ আন্দোলনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার আরও ৮০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে। এর ফলে সংস্কার বিষয়ে আইএমএফের নানা শর্ত জোরদার হয়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভার পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি জানান, উন্নয়ন ঋণ, অনুদান ও বাজেট সহায়তা নিয়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ওপেকসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যৎ সহযোগিতা ও সংস্কার কর্মসূচি নিয়েও মতবিনিময় চলছে।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, সম্প্রতি এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে এবং আরও কিছু বৈঠক নির্ধারিত আছে। তিনি কমনওয়েলথ ফাইন্যান্স ব্রিজ ফোরামে বাংলাদেশের আর্থিক অগ্রগতি ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পদক্ষেপ তুলে ধরেছেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের তুলনায় এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান অনেক ভালো। রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অবস্থা উন্নত, মুদ্রাস্ফীতি কমেছে এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে গতি এসেছে।
তিনি আরও জানান, সরকার ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে। এটি উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সংস্কার কার্যক্রম এখনও চলমান এবং রেগুলেটরি কাঠামো শক্তিশালী করতে সময় লাগবে।’
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং পরবর্তী সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার নির্দেশনা দেওয়াও আলোচনার অংশ। নতুন প্রজন্ম যেন এই সংস্কারের সুফল পায়, তাও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, চলমান স্থিতিশীলতা ও সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতি আগামী বছরগুলোতে আরও উন্নতি করবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির ইতিবাচক রূপান্তর এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃশ্যমান। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুটি নতুন প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে, যা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।’