দুরবস্থায় থাকা পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক একীভূত হওয়ার আলোচনা দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে। ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংক শুরু থেকেই আমানতকারীদের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে, কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকারীদের কী হবে, তা নিয়ে এখনও কোনো পরিষ্কার বার্তা নেই।
সময়সাপেক্ষভাবে একের পর এক গুঞ্জন বিনিয়োগকারীদের মনোবল পাল্টাচ্ছে। কোনো সময় কিছুটা আশাবাদ জন্মায়, আবার কয়েকদিনের ব্যবধানে ভিন্ন গুঞ্জনে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। এই গুঞ্জনের প্রভাবে ব্যাংকগুলোর শেয়ারে দফায় দফায় অস্থিরতা দেখা যায়। এর ফল পুরো পুঁজিবাজারে দীর্ঘ সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একীভূতকরণের আলোচনা শুরু হওয়ার সময় শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ওঠে, যে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওই ব্যাংকগুলোর অভিহিত মূল্যে নতুন ব্যাংকের শেয়ার পাবেন। অল্প দিনের মধ্যেই সেই গুঞ্জন ফিকে হয়ে নতুনভাবে প্রচার হয়, এ বার বলা হয় বিনিয়োগকারীরা পাঁচ ব্যাংকের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে নতুন ব্যাংকের শেয়ার পাবেন। তবে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে গুঞ্জন উঠেছে, ব্যাংকগুলোর সম্পদমূল্য ঋণাত্মক হওয়ায় একীভূত প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুই পাবেন না। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে এমন দফায় দফায় গুঞ্জন থাকলেও সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। তবে গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজার অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এখানে ক্ষুদ্রতম বিষয়কেও কেন্দ্র করে পুরো বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অনেক। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো স্পষ্ট বার্তা নেই। এর ফলে কয়েকদিন পরপর ভিন্ন ভিন্ন গুঞ্জন শেয়ারগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একীভূত ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি দ্রুত স্পষ্ট করা উচিত। নাহলে চলমান অস্থিরতায় ব্যাংকগুলোর শেয়ারদর শূন্য বা এক টাকার নিচে নেমে যেতে পারে। তখন সরকার যদি সেই বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ার দিতেও, বিনিয়োগকারীরা বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখোমুখি হবেন।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের অগ্রগতি দেখে মনে হচ্ছে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো প্যাকেজ নেই। সিদ্ধান্ত যেটিই হোক, তা দ্রুত স্পষ্ট করা উচিত। বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো প্যাকেজ না থাকলেও তা ন্যায়সংগত হবে না। কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারী ব্যাংক লুটপাটের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। প্রথমে আমানতকারীর স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে, তারপর সাধারণ বিনিয়োগকারীর বিষয়টি দেখার কথা। এ কাজ না হলে পুরো শেয়ারবাজারে দীর্ঘ সময় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও তলানিতে নেমে যাবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংক একীভূতকরণ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। যেহেতু একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো সবদিক বিবেচনায় ঋণাত্মক, তাই এত অল্প সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি স্পষ্ট করা কঠিন। তবে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ নিয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। অন্যদিকে, বিএসইসি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি স্পষ্ট করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দায়ী নন। তাই তাদের স্বার্থ রক্ষায় কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন পাঁচ ব্যাংকের প্রত্যেকটির সম্পদমূল্য বর্তমানে ঋণাত্মক। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নিরীক্ষায় ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পায়। নিরীক্ষায় দেখা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ঋণাত্মক ৪৩৮ টাকা ৮১ পয়সা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এনএভিপিএস ঋণাত্মক ১১৭ টাকা ৭২ পয়সা, ইউনিয়ন ব্যাংকের এনএভিপিএস ঋণাত্মক ২২৪ টাকা ৯৭ পয়সা। এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এনএভিপিএস যথাক্রমে ঋণাত্মক ৭৫ টাকা ৭৪ পয়সা এবং ২১৩ টাকা ৫১ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এই ব্যাংকগুলোর উচ্চ পরিমাণে শ্রেণীকৃত ঋণ রয়েছে। পাশাপাশি বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকগুলোর সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সহায়তা দিলেও পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি। গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়ে বারবার তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে। এই অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অস্পষ্ট বার্তা ও একীভূতকরণের আতঙ্কে গত কয়েক মাসে পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারদরে বড় ধরনের পতন দেখা দিয়েছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৮ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৩০ পয়সা, ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার ৮ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪০ পয়সা, এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার ১১ টাকা থেকে ২ টাকা ৮০ পয়সা, আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ১৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৩ টাকায় নেমে গেছে। বিভিন্ন গুঞ্জনের কারণে এখনো প্রতিদিন শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর শেয়ার অস্থির রয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণ দেখায়, একীভূত হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার পাবেন কি না, তা নিয়ে বিগত কয়েক মাসে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। একইভাবে, ব্যাংকগুলো একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় যাবে কি না, তাও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। প্রথমে তিনটি ব্যাংক একীভূতকরণে রাজি হলেও দুটি ব্যাংক নিজস্ব সক্ষমতায় পরিচালনায় আগ্রহ দেখায়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই দুই ব্যাংককেও একীভূতকরণে বাধ্য করে। এ বিষয়গুলো পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারদর তলানিতে নামার প্রধান কারণ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ত অপেক্ষা করছে শেয়ারদর আরও কমার জন্য। যখন ১ টাকা বা তারও নিচে নামবে, তখন বাজারদরের ভিত্তিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সামান্য কিছু শেয়ার দেওয়া হতে পারে। কিন্তু তা হলে বিনিয়োগকারীর স্বার্থের কোনো রক্ষা হবে না। এতে ব্যাংক লুটেরাদের দায় সাধারণ বিনিয়োগকারীর ঘাড়ে চাপানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একীভূত হতে যাওয়া ওই পাঁচ ব্যাংকের দুরবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোনোভাবেই দায়ী নয়। তারা ব্যাংক পর্ষদে নেই। বিনিয়োগ করেছেন ব্যাংকের পূর্বের প্রদর্শিত ভালো পারফরম্যান্স দেখে। প্রকৃত অবস্থা তারা বিচার করতে পারেননি। সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে সরকার পরিবর্তনের পর। এতদিনে শেয়ারবাজারের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সাধারণ শেয়ারহোল্ডারের হাতে বড় পরিমাণ শেয়ার ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেছে। এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বড় ক্ষতির মুখে পড়ে, শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না।’
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ১২০ কোটি ৮১ লাখ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৫ শতাংশের বেশি। প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ২৯ শতাংশ শেয়ার। মাত্র ৬ শতাংশ শেয়ার কোম্পানি উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে।
- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৮৭ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ৯৮ কোটি ৭৪ লাখ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীর মালিকানা প্রায় ৩২ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৩ শতাংশ শেয়ার, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ১৫.৪৩ শতাংশ।
- ইউনিয়ন ব্যাংকের ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ১০৩ কোটি ৬৩ লাখ। সাধারণ বিনিয়োগকারীর মালিকানা প্রায় ৩২ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আছেন প্রায় ১৪ শতাংশ শেয়ারে। ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৫৪ শতাংশ শেয়ার।
- এক্সিম ব্যাংকের ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ১৪৪ কোটি ৭৬ লাখ। সাধারণ বিনিয়োগকারীর মালিকানা ৩৯ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আছেন ২৯ শতাংশ শেয়ারে। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে মাত্র ৩২ শতাংশ।
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ১১৪ কোটি ২ লাখ। সাধারণ বিনিয়োগকারীর মালিকানা ১৮ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ৭০ শতাংশ। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে মাত্র ১২ শতাংশ শেয়ার।
নিরীক্ষক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর সম্পদ ঋণাত্মক হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুই পাবেন না। তবে বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন। বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসিসহ রেগুলেটরি সংস্থা থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা এতদিন প্রকাশ হয়নি। এতে ওই সংস্থাগুলোরও ব্যর্থতা রয়েছে। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যদি তাদের স্বার্থ নিশ্চিত না করে একীভূতকরণ সম্পন্ন হয়, তাহলে দীর্ঘ সময় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশেকুর রহমান বলেন, ‘সরকার ওই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করতে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধনের জোগান দেবে। এতে ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে, যা পুঁজিবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি উপেক্ষা করা হলে, দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারে আস্থা কমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রয় মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করা, ঋণের বিপরীতে সংরক্ষিত আমানত ও দায়ী ব্যক্তিদের স্থায়ী-অস্থায়ী সম্পত্তি ক্রোক করে আদায়যোগ্য অর্থ বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
এছাড়া শেয়ারবাজারের বাজারমূল্য বা ফেসভ্যালুর মধ্যে যেটি বেশি, সেটি বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষা এবং একীভূতকরণের অনুপাত নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিএসইসি সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত না করে ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজার থেকে তালিকাভুক্তি বাতিল না করার পরামর্শ দিয়েছে। বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেই আহ্বান জানিয়ে আমরা গভর্নরকে চিঠি দিয়েছি। প্রয়োজন হলে বিএসইসি পদক্ষেপ নেবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নতুন ব্যাংকের শেয়ার পাবেন কি পাবেন না, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত মার্জারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাস্তবায়নে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে। মার্জ করতে গেলে নানা বিষয় সামনে আসবে। ব্যাংক রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫ অনুযায়ী সব ধাপ মেনে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’
আর্থিক সংকটাপন্ন ওই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্যাংক তৈরি করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত ব্যাংকের দুটি নাম সুপারিশ করা হয়েছে—‘ইউনাইটেড ইসলামিক ব্যাংক’ ও ‘সম্মিলিত ইসলামিক ব্যাংক’। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই পদক্ষেপ ব্যাংকিং খাতে ‘রেজল্যুশন’ প্রক্রিয়ার সূচনা করবে।
প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, আর পরিশোধিত মূলধন আনুমানিক ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানত বেইল-ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূলধনে রূপান্তর করা হতে পারে। বাকি ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার মূলধন হিসেবে যোগ করবে।
উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদনের পর প্রধান উপদেষ্টা পরিষদের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ব্যাংকগুলো একীভূত হওয়ার ফলে কেউ চাকরি হারাবেন না এবং কোনো আমানতকারীও তার আমানত হারাবেন না। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।