দেশের বিনিয়োগ ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব করতে এবার বড় ধরনের পুনর্গঠনের পথে হাঁটছে সরকার। ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা সব বিনিয়োগ প্রমোশন সংস্থাকে একত্র করে একটি কেন্দ্রীয় ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি (আইপিএ) গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকারের লক্ষ্য—একটি সংস্থার অধীনে সব বিনিয়োগসেবা এনে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’ নিশ্চিত করা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সরকার। এই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ চলছে শেষ ধাপে।
চার সংস্থা মিলছে এক ছাতার নিচে
নতুন কাঠামোর অধীনে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনস অথরিটি (বেপজা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি (বেজা) এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটিকে একীভূত করা হবে।
এছাড়া আলোচনায় আছে আরও দুটি সংস্থা—পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) অথরিটি ও বাংলাদেশ স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিক)—যাদেরও এই কেন্দ্রীয় কাঠামোর আওতায় আনার প্রস্তাব বিবেচনাধীন।
গভর্নিং বোর্ড ও আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ
বিডা সূত্রে জানা গেছে, নতুন সংস্থার জন্য একটি গভর্নিং বোর্ড গঠনের কাজ শুরু হয়েছে, যা হবে পুরো কাঠামোর মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, একটি আন্তর্জাতিক কনসালটিং ফার্ম নিয়োগ করা হচ্ছে, যারা আইপিএর সাংগঠনিক রূপরেখা, আইনগত কাঠামো ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা তৈরি করবে।
বিডার নির্বাহী সদস্য নাহিয়ান রহমান রোচি জানিয়েছেন, “উচ্চপর্যায়ের কমিটি ইতিমধ্যে দুইটি মূল কাজ চিহ্নিত করেছে—বোর্ড গঠন ও পরামর্শক নিয়োগ। অক্টোবরের মধ্যেই কনসালটিং ফার্ম নিয়োগ শেষ হবে এবং নভেম্বর থেকে তারা কাজ শুরু করবে। তিন মাসের মধ্যে পুরো রূপরেখা জমা পড়বে।”
তার ভাষায়, “আমরা চাই এক জায়গা থেকেই বিনিয়োগকারীরা সব সেবা পাক—হোক সেটা জমি, নীতি, পারমিট বা অবকাঠামো সহায়তা।”
বাতিল ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চায় নতুন বিনিয়োগকারী খোঁজ
এদিকে, সম্প্রতি বাতিল হওয়া ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চাটিতে নতুন বিনিয়োগকারী খোঁজার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী সদস্য সালেহ আহমেদ বলেন, “ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পটি এখন আর নেই। আমরা এখন নতুন ও যোগ্য বিনিয়োগকারীদের খুঁজছি, যারা কার্যকরভাবে প্লটগুলো ব্যবহার করতে পারবে।”
তিনি আরও জানান, “আগের অভিজ্ঞতা ভালো না হওয়ায় বড় প্লট আর কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। বরং সেরা বিনিয়োগকারীদের জন্য ছোট প্লটে ভাগ করে জমি বরাদ্দ দেওয়া হবে।”
লক্ষ্য: বিনিয়োগবান্ধব বাংলাদেশ
সরকার মনে করছে, বিভিন্ন সংস্থার জটিলতা ও সমন্বয়হীনতা দূর করতে এই একীভূত কাঠামো বড় ভূমিকা রাখবে।
সব বিনিয়োগ–সংক্রান্ত নীতি, অনুমোদন, জমি বরাদ্দ, রপ্তানি অঞ্চল ও প্রযুক্তি পার্ক—সবকিছু যদি এক ছাতার নিচে আসে, তাহলে শুধু প্রক্রিয়া সহজ হবে না, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও বাড়বে।
ফেব্রুয়ারির মধ্যেই যদি নতুন আইপিএ বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি হতে পারে বাংলাদেশের বিনিয়োগ খাতের সবচেয়ে বড় প্রশাসনিক সংস্কার—যার লক্ষ্য একটাই:
“এক দরজায় সব সেবা, এক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বিনিয়োগবান্ধব ভবিষ্যৎ।”

