Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Mon, Oct 20, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বানিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • প্রযুক্তি
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি
    অর্থনীতি

    দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি

    মনিরুজ্জামানOctober 20, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    ফাহমিদা খাতুন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক।
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

     সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ডের সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো।

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে গ্র্যাজুয়েশন করা ফাহমিদা যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেন। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া, বৈষম্যহীন ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গঠিত বিশেষজ্ঞ টাস্কফোর্সের সদস্য ছিলেন। একই সঙ্গে পরিসংখ্যান ব্যুরোকে শক্তিশালী করার উদ্যোগেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

    ড. ফাহমিদা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতির গতি কিছুটা ধীর হয়েছে। তিনি জানান, “অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ কৌশল এবং কার্যকর নীতি প্রয়োজন। সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ছাড়া আমরা টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারব না।” তিনি আরও যোগ করেন, “সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে।

    ড.ফাহমিদার মতে, অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় বৈষম্য কমানো ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সতর্ক করে বলেন, “শুধু বৃদ্ধি নয়, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়ন ধারাবাহিক হবে না।”

    প্রশ্ন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সময়ে কেমন চলছে অর্থনীতি?

    ড. ফাহমিদা খাতুন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় অর্থনীতির অবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই অবনমনের দিকে ছিল। সেটা উচ্চ মূল্যস্ফীতি কিংবা বৈদেশিক রিজার্ভ কিংবা বিনিময় হার—সব দিকেই এক ধরনের অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা, খেলাপি ঋণের স্ফীতি, বিদ্যুৎ-জ্বালানির উচ্চ ব্যয়, সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতাসহ সামগ্রিকভাবেই ছিল সুশাসনের অভাব অর্থাৎ যেসব ধারা বা সূচক অর্থনীতির সামষ্টিক স্থিতিশীলতাকে নির্ধারণ করে, সেগুলো খুব দুর্বল অবস্থায় ছিল। ফলে সেখান থেকে কাজ করা যে কোনো সরকারের জন্যই ছিল কঠিন। স্বভাবতই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল।

    এ ক্ষেত্রে বেশকিছু ভালো উদ্যোগ তারা খুব দ্রুত নিয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বলব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উচ্চ ঋণখেলাপি এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি খাতের কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নতুন করে গঠন করা হয়েছে। কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা বুঝতে ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ করা, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে ব্যাংকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার মতো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঋণখেলাপি রাতারাতি কমানো যাবে না। তবে এটা যেন আর না বাড়ে, সেসব উদ্যোগ আবশ্যক। দুর্বল কয়েকটি ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে করে এগুলো ভালোভাবে সচল হতে পারে।

    এর বাইরে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখেছি আমদানি সংকোচন করে ব্যাল্যান্স অব পেমেন্টটা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। এটার অন্যতম কারণ একদিকে রপ্তানি আয় শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে; অন্যদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। আগে হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ চ্যানেলে যে পরিমাণ টাকা পাঠানো হতো, সেটা কমেছে। তার ফল ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থাৎ বৈধপথে প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে। এই দুইয়ের সম্মিলনেই রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর বাইরে টাকা ও ডলারের বিনিময় হারে একটি স্থিতিশীলতা এসেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, সেটাও ঠিকঠাক কাজ করেছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, এসব উদ্যোগের কারণে এ খাতে একটি ভালো অবস্থা বিরাজ করছে।

    তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিটে চলে গিয়েছিল, সেটাও হ্রাসের ক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে। যদিও তা ধীরে ধীরে কমছে, যেটি স্বাভাবিক। কেননা উচ্চ মূল্যস্ফীতি রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়। এর আগের সরকারের সময় আমরা দেখেছি যে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল, অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বাড়লে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, যেমন সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু সুদের হারের ওপর ক্যাপ দিয়ে রাখা হয়েছিল। এসব কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানো যায়নি। কারণ মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর, আর সুদের হার ৯ শতাংশ। টাকা হয়েছিল সস্তা, এটা একটা বিষয়। আবার শুধু সংকোচনমূলক নীতি দিয়েই মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। একদিকে সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ এবং অন্যদিকে সরকার যদি প্রচুর ব্যয় করতে থাকে, তাহলে কাজ করবে না। আর্থিক নীতি যদি সম্প্রসারণমূলক হয়, সরকারের প্রকল্প ব্যয়, প্রশাসন ব্যয়, পরিচালন ব্যয় যদি বাড়তে থাকে, তাহলে আবারও বাজারে অর্থের ছড়াছড়ি হবে। বিরূপ প্রভাব পড়বে।

    প্রশ্ন: সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তার ফলও দৃশ্যমান। ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করবে বাংলাদেশ। চ্যালেঞ্জগুলো যথাযথভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে কি?

    ড. ফাহমিদা খাতুন: ভালো পদক্ষেপের বাইরে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে। সেগুলো অনেকদিন থেকেই আসছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। এটা তো আমরা আগেই জানতাম কিন্তু আমরা দেখেছি যে, বিগত সরকারের আমলে এ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যদিও বিগত সরকারকে সর্বদাই বলতে শোনা যেত—স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হয়ে যাব, উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবো, এতে দেশের ভাবমূর্তি উন্নত হবে। মূলত এসব ছিল তাদের কথার ফুলঝুরি। তারা মূলত এটা রাজনৈতিক অর্জন বলেই মনে করতেন কিন্তু এই রাজনৈতিক অর্জনের বিপরীতে যে ধরনের প্রস্তুতির দরকার ছিল, তা তারা নেয়নি।

    প্রস্তুতিটা কেন নিতে হবে? কারণ, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন মানেই স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে একটা দেশ যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে, সেগুলো আর পাওয়া যাবে না। এর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। একটি হচ্ছে—বাংলাদেশের পণ্য শুল্কমুক্ত বা কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পায় উন্নত দেশে, আবার কিছু উন্নয়নশীল দেশেও এটা পায়। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে শুধু অস্ত্র ছাড়া আমাদের সব পণ্যেই প্রবেশাধিকার পায়। এটা প্রতিযোগিতার বাজারে আমাদের সক্ষমতায় বিরাট সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে এ সুযোগ আর থাকবে না।

    এ ছাড়া চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশও এ সুযোগ-সুবিধা আমাদের দিয়ে থাকে। ভারতও দিয়েছে এক সময়। এসব সুবিধা আর আমাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবেই থাকবে না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে থাকি। বিভিন্ন অনুদান আসে। এলডিসিতে থাকায় বাংলাদেশ সুলভ সুদে ঋণ পেয়ে থাকে। অনুদানের পরিমাণ অনেক আগে থেকেই বেশ কমে গেছে। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে সুলভ মূল্যের ঋণ পাওয়া কমে যাবে, ঋণ পরিশোধের সময়সীমাটাও লম্বা থাকবে না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বাণিজ্যিক হারে সুদ দিয়ে অন্যান্য দেশের মতোই একই শর্ত মেনে ঋণ নিতে হবে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে।

    এ ছাড়া ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি Trade-Related Aspects of Intellectual Property Rights (TRIPS)-এর অধীনে আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালস যে সুযোগগুলো পায়, যেমন—আমাদের ওষুধের পেটেন্ট করাতে হয় না, যার ফলে ওষুধের দাম কম রাখতে সক্ষম হয়েছি ইত্যাদি বন্ধ বা কমে যাবে। এসব সুযোগ যখন আমরা হারাব, তখন বিরাট ধাক্কা আসবে। এর জন্য আমরা প্রস্তুত কি না? আমাদের দেশে যখন অন্যান্য দেশের পণ্য প্রবেশ করে, তখন বড় আমদানি কর দিতে হয়। আমদানি কর ধীরে ধীরে যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে হবে, কমাতে হবে এবং ক্রমেই তা শূন্য করে ফেলতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি আছে কি? আমাদের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন অর্থাৎ করের জন্য আমরা পরোক্ষ করের ওপর নির্ভর করি। আমাদের রাজস্বের ৬৫ শতাংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে।

    সেখানে প্রত্যক্ষ কর ৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে আমদানি কর ও বিভিন্ন ধরনের প্যারা ট্যারিফ রয়েছে। এগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে আমাদের। এসব উদ্যোগে এক ধরনের অনীহা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয় কমে যাওয়ার শঙ্কা থেকে এদিকে দৃষ্টি দেয়নি। বিভিন্ন দিকে যে প্রস্তুতি থাকা দরকার, সেটা অনুপস্থিত। একদিকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার উঠে যায়, আবার তাদের প্রণোদনা ও অর্থ সহায়তা উঠে যায়, তাহলে দুদিক থেকেই তারা চাপের মুখে পড়বেন। এর জন্য ধীরে ধীরে এটাকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত।

    প্রশ্ন: বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন হয়েছে। কিন্তু ব্যবসা সংস্কার কমিশন হয়নি। আপনার কি মনে হয় না এদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত ছিল?

    ড. ফাহমিদা খাতুন: যেহেতু ২০২৬ সাল বেশি দূরে নয়, সেহেতু প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ছিল অনেক আগে থেকেই। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এ বিষয়ে খুব বেশি প্রস্তুতি আমরা দেখিনি। ইদানীং সরকার বলছে যে, এলডিসি থেকে উত্তরণ আর পেছানো যাবে না কিন্তু শুরুর দিকে সরকারও কিছুটা কনফিউজড ছিল। তারা এক সময় বলেছিল, এটা তারা পেছাবে। এজন্য তারা আবেদন করবে। তারপর আবার সেখান থেকে সরে এলো সরকার। এটা একটা ভুল বার্তা। এটার একটা কারণ হতে পারে, সরকার হয়তো রপ্তানিকারকদের সঙ্গে শুরু থেকেই আলাপ-আলোচনা করেনি। কিংবা সরকারের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যে রকমের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, সেটি নেওয়া হয়নি।

    কিছু কিছু হয়তো নেওয়া যাবে। যতটুকু সময় আছে, ততটুকু সর্বোচ্চ কাজে লাগানো দরকার। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, একবারেই ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা বন্ধ করে দিতে পারবে না সরকার। কোথায় কোথায় বন্ধ করা যাবে এবং কোথায় কোথায় বিকল্প অন্যকিছু দেওয়া যাবে, তা ভাবা যেতে পারে। কেননা প্রত্যক্ষভাবে প্রণোদনা কিংবা অর্থ সহায়তা আর দেওয়া যাবে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমরা আগামী বছর গ্র্যাজুয়েশন করলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে আরও তিন বছর একটা গ্রেস পিরিয়ড পাব। তিন বছর একটা মসৃণ ট্রানজিশন হওয়ার জন্য তারা আমাদের সময় দেবে। এ সময়ে স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধাগুলো পেতে থাকব। এটা চীনও দিয়েছে ২০২৮ সাল পর্যন্ত। ইউকে দিয়েছে। কাজেই এই এক বছরের সঙ্গে তিন বছর ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে।

    প্রশ্ন: জুলাই অভ্যুত্থানে তরুণদের প্রধান দাবি ছিল কর্মসংস্থান—চাকরির অভাব, চাকরিতে বৈষম্য। এখনো কর্মসংস্থান বাড়ছে না, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেই। এক বছরে কি সেই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পেরেছি?

    ড. ফাহমিদা খাতুন: সত্যি কথা বলতে, আমরা এখনো কোনো কাজের সন্ধান দেখছি না। কোনো কর্মসংস্থান গত এক বছরে হয়নি। বরং কমে যাচ্ছে। গত এক বছরে নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। অর্থনীতি কি প্রসারিত হয়েছে? উৎপাদন-উৎপাদনশীলতা কি বেড়েছে? না। বরং আমরা রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখলাম। এত বড় রকমের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সাধারণত কিছুদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল থাকে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি দুর্বল থেকে দুর্বলতরই হচ্ছে। আর এ পরিবেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী বটেই, দেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও অনুকূল নয়। একটা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন কলকারখানা হামলা-আক্রমণের শিকার হয়েছে। বাড়িঘর, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিমানুষও আক্রমণের শিকার হয়েছে। শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা, এমনকি জীবননাশের মতো ঘটনা ঘটেছে।

    এরকম একটি ভীতিকর পরিস্থিতিতে কেউ বিনিয়োগ করবে না। এমনিতেও যখন স্বল্প সময়ের জন্য কোনো সরকার থাকে, তখন বিনিয়োগ প্রবণতা কম থাকে। তার ওপর এমন শঙ্কাময় পরিস্থিতি কখনোই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নয়। কারণ, বিনিয়োগকারীরা একটা স্থিতিশীল পরিবেশ চায়, একটা নিশ্চয়তার পরিবেশ চায়। ফলে পরিস্থিতি ভালো না হলে বিনিয়োগ হবে না। বর্তমান পরিস্থিতি সেই অস্থিতিশীলতারই প্রতিফলন। লক্ষ করবেন, কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী বলেই দিয়েছেন যে, তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন না। বিনিয়োগকারীরা এখানে এসেছেন। সামিট করেছেন। তারা মূলত দেখতে এসেছেন, বুঝতে এসেছেন। এটা ভবিষ্যতের জন্য। ফলে এরকম পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির আসলেই কোনো সুযোগ নেই।

    প্রশ্ন : কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

    ড. ফাহমিদা খাতুন: এটা বড় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ। এ সংস্থাগুলো অনেকদিন ধরেই আলাদাভাবে কাজ করছে। তাদের কিছু নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। কিছু কিছু কাজ হয়তো ওভারল্যাপিং আছে কিন্তু তার বাইরে আরও কিছু কাজ আছে। যদি এগুলোকে একীভূত করতেই হয়, সেটা আরও বিচার-বিবেচনার দরকার ছিল। কিংবা নির্বাচিত সরকার এসে যদি করত, তাহলে হয়তো ভালো হতো। আপনি হয়তো বলবেন, রাজনৈতিক সরকার সাধারণত এসব কাজ করে না। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আমরা শুনেছি, অনেকের মধ্যেই একটা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে যে, আসলেই কি এই কাজগুলো আগের মতো করা যাবে কি না। এটা কি দক্ষতা বৃদ্ধি করবে নাকি আরও কিছু সমস্যার সৃষ্টি করবে? এটা আসলে আরও বিবেচনা করা প্রয়োজন।

    প্রশ্ন: ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ উন্নয়নের কথা বলে আসছেন। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা একাধিকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আপনার অভিমত কী?

    ড. ফাহমিদা খাতুন: যারা ব্যবসা করছেন, তারা প্রচণ্ড মানসিক শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। একদিকে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, অনেকদিন থেকেই বাড়ছিল; কিন্তু এখন সেটা আরও বাড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বাড়তি জ্বালানির দাম, যোগাযোগ ব্যবস্থায় ত্রুটি, অবকাঠামোগত দুর্বলতার পাশাপাশি ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম কমেনি। সুতরাং ব্যবসার ব্যয় বাড়ছে। অন্যদিকে, রয়েছে এক ধরনের ফিজিক্যাল থ্রেট। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে কারখানা ভেঙে ফেলা হচ্ছে, জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। এমন অবস্থায় কতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করা সম্ভব, সেটা সবারই বোধগম্য হওয়া দরকার। ব্যবসায়ীরা হয়তো আর কোনো উপায় না দেখে শঙ্কার কথা বলছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন। এটাই তাদের পেশা। তারা হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করবেন না। কারণ, এর সঙ্গে জড়িত বহু মানুষের জীবন-জীবিকা। ফলে ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে এ কথা তাদের অসহায়ত্বের প্রতিফলন। এটা ভালো কোনো বার্তা নয়।

    প্রশ্ন: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো এ সরকারের মেয়াদেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ উদ্যোগকে কীভাবে দেখছেন?

    ড. ফাহমিদা খাতুন: বেতন বাড়ানো সবার জন্যই প্রয়োজন। সরকার হয়তো সরকারি চাকরি যারা করেন, তাদের প্রতি দায়িত্বের কথা ভেবেছেন। কিন্তু অন্য খাতগুলো একই সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। কিছু জায়গায় সর্বনিম্ন পারিশ্রমিক এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, তা দিয়ে ন্যূনতম মান বজায় রেখে জীবনযাত্রা চালানো সম্ভব নয় কিন্তু সেসব খাতে মজুরি বাড়ছে না। সরকারকে সেদিকেও নজর দিতে হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের সরকার বেতন বাড়াবে; কিন্তু যারা সরকারি চাকরি করেন না, তাদের কী হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারের যে ভূমিকা পালন করার দায়িত্ব, সেই ভূমিকা পালন করা উচিত। সবার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরতদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে দায়িত্বশীল হন।

    প্রশ্ন: নির্বাচিত হলে কোন রাজনৈতিক দল কী করবে, তা আলোচনা হচ্ছে বছরজুড়েই। কিন্তু অর্থনীতির বিষয়টি রাজনীতিকদের আলোচনায় তেমনভাবে আসেনি। অর্থনীতি বা বাণিজ্যের গুরুত্ব রাজনীতিকদের কাছে কমে গেছে?

    ড. ফাহমিদা খাতুন: গত এক বছর সংস্কার কমিশনগুলোয় রাজনৈতিক বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। অর্থনীতির জন্য একটা টাস্কফোর্স হয়েছে। সেখানে কিছু সুপারিশ আছে। এগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তবে গত এক বছরে মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল রাজনীতি। রাজনীতির বিষয়গুলো ছিল অত্যন্ত জটিল। সংবিধান, নির্বাচনের মতো বিষয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। এখনো এসব বিষয়, বিশেষ করে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে পরিষ্কার কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এসব বিষয়ে রাজনীতিকরা এতটা বেশি মনোযোগী ছিলেন যে, অর্থনীতির ব্যাপারটি তাদের কাছে উপেক্ষিত রয়ে গেছে। তারা এর মধ্যে মনোযোগ দিতে পারেননি। অর্থনীতি একটি নাজুক অবস্থার মধ্যে ছিল, যাকে কিছুটা টেনে তোলা গেছে। পরিপূর্ণভাবে বের করে আনতে সময় লাগবে। যদি এ জায়গাটাকে অ্যাড্রেস না করি, তাহলে আবার পতনের দিকে যাবে।

    যে কারণে আন্দোলন হলো, তা ছিল মূলত কর্মসংস্থানের সংকট। একমাত্র সরকারি চাকরি পাওয়া যেত, সেটা পর্যাপ্ত নয়। আবার সেখানে ছিল কোটার প্রতিবন্ধকতা। কথা হচ্ছে, গত এক বছরেই বা কী হলো? নতুন করে কর্মসংস্থান তৈরি করা গেল না কেন? তরুণদের আন্দোলন যে কর্মসংস্থান সংকটের কারণে হলো, সরকারের মূল কর্তব্যের মধ্যে বিষয়টি প্রাধান্য পাওয়া উচিত ছিল। তা দেখা গেল না। তবে আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মেনিফেস্টোতে অর্থনীতির বিষয়টি গুরুত্বের জায়গায় আনতে হবে। নির্বাচিত হয়ে দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে স্বস্তি আসবে, তার সুনির্দিষ্ট বক্তব্য থাকা জরুরি।

    রাজনীতিকদের হয়তো সব পরিকল্পনা আছে যে, তারা কীভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন, কীভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়াবেন। তবে কিছু বড় বড় ইস্যু রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় সুশাসন ফেরাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানে কীভাবে সুশাসন ফেরানো যাবে এবং এগুলোকে কীভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা যাবে, তা ভাবতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার বা প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের মধ্য দিয়েই ফলটা দৃশ্যমান হবে। এসব সংস্কার ছাড়া একটা ইতিবাচক ও টেকসই ফল পাওয়া যাবে না।

    সূত্র: সিপিডি

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    অর্থনীতি

    চিকিৎসা যন্ত্র মনিটরিংয়ে ২৯ কোটি টাকার সফটওয়্যার কি কাজে আসবে?

    October 20, 2025
    অর্থনীতি

    কার্গো ভিলেজের আগুনে প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা

    October 20, 2025
    অর্থনীতি

    আজ বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্যে মানসম্মত পরিসংখ্যান’

    October 20, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.