কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোটি টাকার শেয়ার ও গুলশানের গুরুত্বপূর্ণ জমি বিক্রি করে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার তার ঋণ ও বকেয়া বেতন পরিশোধের উদ্যোগ নিচ্ছেন। এটি কার্যত একটি বিরল দৃশ্য, যেখানে জেল থেকে কোম্পানির আর্থিক তত্ত্বাবধানে এমন সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে নজরুল ইসলামের নামে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে শ্রমিকদের আগষ্ট মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। রাজধানীর গুলশানের ৪০ শতক জমি বিক্রির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে, যার থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ঋণ পুনঃতফসিল এবং বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
নাসা গ্রুপে নিয়োগকৃত প্রশাসক আরিফ আহমেদ খান গত ১৯ অক্টোবর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠিতে জানিয়েছেন, ১৭ হাজারের বেশি শ্রমিকের বেতন ইতোমধ্যে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গেছে। যেসব শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে সমস্যা ছিল, তাদের বেতন দ্রুত পরিশোধের জন্য কাজ চলছে।
নাসা গ্রুপের ব্যাংক ঋণ ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি, যা গ্রুপের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্পে বড় ধাক্কা দিয়েছে। জুলাই মাস থেকে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ রয়েছে। সরকার ঋণ পুনঃতফসিল এবং শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য নাসা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও ১% ডাউন পেমেন্টের শর্তে ঋণ পুনঃতফসিলের অনুমোদন দিয়েছে।
শেয়ার ও সম্পত্তি বিক্রির অনুমোদন আদালতের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। আদালত শুধুমাত্র শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য এই অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে ৮৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি প্রক্রিয়াধীন, যার অর্ধেকই ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। এই অর্থ দিয়ে সেপ্টেম্বর মাসের বেতনও পরিশোধ করা হবে।
নাসা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মোহাম্মদ সাইফুল আলম জানিয়েছেন, বর্তমানে চালু থাকা ৯টি কারখানার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ সম্পন্ন হয়েছে। যেসব কারখানা বন্ধ আছে, সেগুলোতে শ্রমিকদের বেতন অক্টোবর মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। গ্রুপের স্থিতিশীলতার জন্য মোটামুটি ২৫০ কোটি টাকার তাত্ক্ষণিক প্রয়োজন।
নাসা গ্রুপের ইতিহাসও নজরকাড়া। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রুপে নজরুল ইসলাম মজুমদার একসময় সরকারী সুবিধা ও রাজনৈতিক আনুকূল্যে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। তবে গত বছরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দুর্নীতির অভিযোগে তিনি কারাগারে যাওয়ায় গ্রুপের ব্যবসা ব্যাহত হয়েছে। শেয়ার বিক্রি ও জমি বিক্রির মাধ্যমে এখন তিনি শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ এবং ঋণ পুনঃতফসিলের চেষ্টা চালাচ্ছেন।