হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশবন্ধু গ্রুপের একাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে কেবল পাঁচটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা টিকে আছে, তাও মাত্র ২৫ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। এতে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে চিঠি দিয়ে জরুরি হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশবন্ধু গ্রুপের ঋণ পুনঃতফসিল, কার্যকর মূলধন সরবরাহ এবং ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা পুনরায় চালু করা হলে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দেশবন্ধু গ্রুপের বেশ কিছু কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মাত্র পাঁচটি পোশাক কারখানা আংশিকভাবে চালু আছে কিন্তু পর্যাপ্ত মূলধন না থাকায় এবং নতুন এলসি খুলতে না পারায় উৎপাদন এখন প্রায় স্থবির। চিঠিতে মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, ১৯৮৯ সাল থেকে দেশবন্ধু গ্রুপ দেশের শিল্পখাতে বড় অবদান রেখে আসছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় ও মাঝারি শিল্প গড়ে তুলে তারা প্রায় ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে, কিন্তু কাঁচামাল ও মূলধনের ঘাটতিতে এখন বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ, আর যে কয়েকটি চলছে তাও সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ সক্ষমতায়। পর্যাপ্ত আয়ের অভাবে শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে বড় ধরনের শ্রম অস্থিরতার আশঙ্কা করছে ব্যবস্থাপনা ও মন্ত্রণালয়।
দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান বলেন, আগে তাদের রপ্তানি আয় বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার ছিল। এখন সেই অঙ্কের এক-চতুর্থাংশও অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। তার দাবি, প্রতিষ্ঠানটি সব সময় নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়েছে এবং কখনো সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়নি, কিন্তু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক বছরেরও বেশি সময় আগে তাদের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দেয় এবং পরে খেলাপি ঘোষণা করে। তিনি আরও বলেন, “আমরা ঋণ পুনঃতফসিল ও ব্যবসা পুনরুজ্জীবনের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু ইতিবাচক সাড়া পাইনি, ফলে আজ আমরা এই সংকটে পড়েছি।
গোলাম রহমান জানান, ২০০৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তারা ১৩ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সুদ বাদে এখন বকেয়া মূল ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশবন্ধু গ্রুপের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। গ্রুপটির ২৭টি প্রতিষ্ঠানে সরাসরি ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। গোলাম রহমান বলেন, “যদি ব্যাংকগুলো ২ হাজার কোটি টাকা কার্যকর মূলধন ও ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়, তবে পুরো সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি গ্রুপটি ৮২৫ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন দেশবন্ধু সুগার মিলের পুনর্গঠন প্রকল্পে প্রত্যাশিত উৎপাদন না পাওয়া, ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদের হার, এবং ডলারের উচ্চমূল্য—যা একসময় ৮৪ টাকায় পাওয়া গেলেও বর্তমানে ১২৩ টাকায় কিনতে হয়েছে।

