Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Sat, Oct 25, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বানিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • প্রযুক্তি
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » অর্থনীতি বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজনীতি মুক্ত হতে হবে
    অর্থনীতি

    অর্থনীতি বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজনীতি মুক্ত হতে হবে

    কাজি হেলালOctober 24, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ অবস্থার মুখোমুখি। মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ সংক্রান্ত সমস্যা এবং ব্যাংকিং খাতে তদারকির অভাব দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করছে। এই সংকটের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমে রাজনৈতিক প্রভাব। রাজনৈতিক চাপের কারণে মুদ্রানীতি এবং ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ প্রায়ই স্বল্পমেয়াদী রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণের জন্য বিকৃত হয়। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জনগণের আস্থা কমে যায়। আন্তর্জাতিক গবেষণা দেখিয়েছে, একটি স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ঋণের মান রক্ষা এবং আর্থিক বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

    বর্তমান বাস্তবতা প্রমাণ করছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা হ্রাস পাওয়া মানে শুধু সংস্থার নিয়ন্ত্রণহীনতা নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য ও জনগণের আস্থারও ক্ষতি। তাই এখন সময় এসেছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে কেবল স্বায়ত্তশাসন দেওয়া নয়, প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক স্থিতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

    অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা অপরিহার্য। স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি নির্ধারণ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো নিরপেক্ষভাবে করতে সক্ষম হয়। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকলে ব্যাংকের সিদ্ধান্তগুলো জনগণের স্বার্থের পরিবর্তে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে, যা অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

    বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত (২০২৪–২০২৫): বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্তিশালী ও স্বাধীন ভূমিকা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি দেখা গেছে মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক বিনিময় হারের ওঠানামা এবং ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের কারণে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে, তবে তা কার্যকরভাবে নীতি নির্ধারণ ও তদারকি করতে পারে।

    বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারেও ইতিমধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ- ব্যাংকিং খাতের কার্যকারিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তবে এই ধরনের উদ্যোগ সাফল্যমণ্ডিত হতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে কার্যক্রম চালানো জরুরি, যাতে নীতি-সংস্কার দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য হয়।

    একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও অর্থনৈতিক পরিবেশকে স্থিতিশীল করা একটি স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সম্ভব। রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত থাকলে ব্যাংক আরও বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ও আর্থিক বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেখানে আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও ঋণসংক্রান্ত জটিলতা বেড়েই চলেছে; সেখানে একটি স্বাধীন, প্রভাবমুক্ত এবং শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংকই হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার মূল চাবিকাঠি।

    অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা কেন জরুরি: বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনা, ঋণখেলাপি এবং দুর্বলতা দেখা দিয়েছে; যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়া অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অতীতের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যাংকগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে অনেক দুর্বল ব্যাংক তৈরি হয়েছে এবং অর্থের অপচয় হয়েছে। এছাড়া শুধুমাত্র স্বায়ত্তশাসন যথেষ্ট নয়; প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নীতিনির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে।

    স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়। রাজনৈতিক স্বার্থের চাপে না থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদী অর্থনীতির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে পারে, যা বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য অপরিহার্য।

    রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কেন্দ্রীয়ব্যাংক, ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্যও রক্ষা করে। এটি নন-পারফর্মিং লোন (NPL) কমাতে, তদারকি শক্তিশালী করতে এবং আর্থিক ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এর ফলে ব্যাংকিং খাত আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হয় এবং আমানতকারীদের আস্থা বাড়ে। স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে যা প্রাথমিকভাবে অজনপ্রিয় মনে হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়। উদাহরণ স্বরূপ- ব্যাংকের পুনঃঅ্যাকাউন্টিং, ঋণ সংস্কার এবং কঠোর মুদ্রানীতি রাজনৈতিক চাপমুক্ত থাকলে আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়।

    বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ওঠানামা করছে, বৈদেশিক বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা দেখা দিচ্ছে এবং ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে, ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক চাপমুক্ত একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয়ব্যাংক ছাড়া বাংলাদেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং দেশের অর্থনীতির প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা কঠিন। অতিরিক্তভাবে রাজনৈতিক নেতা ও তাদের দোসরদের প্রভাবের কারণে অনেক সময় যোগ্য নয় এমন ব্যক্তিদের ঋণ দেওয়া হয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতার অন্যতম কারণ। একটি স্বাধীন এবং প্রভাবমুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এসব সমস্যা সমাধান করতে পারে এবং দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে সক্ষম।

    রাজনৈতিক প্রভাবের নেতিবাচক পরিণতি: রাজনৈতিক প্রভাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক চাপের কারণে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ প্রায়শই স্বল্পমেয়াদী রাজনৈতিক স্বার্থের দিকে মোড় নেয়, যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পথে বাঁধা তৈরি করে। এছাড়াও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ কিছু পরিবার বা গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হতে পারে, যা খাতের স্বচ্ছতা, আর্থিক শৃঙ্খলা এবং জনগণের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, ঋণসংক্রান্ত জটিলতা এবং নন-পারফর্মিং অ্যাসেটের বৃদ্ধির মতো সমস্যার জন্ম দিতে পারে।

    সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাজনৈতিক চাপের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মূল লক্ষ্য, মূল্য স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক নিয়ন্ত্রণ থেকে সরে যেতে পারে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায় এবং বাজারে ঝুঁকি বাড়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেমন: মুদ্রাস্ফীতি ওঠানামা, বৈদেশিক বিনিময় হারের অস্থিরতা এবং ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের অভিযোগ এবং মাত্রাতিরিক্ত ঋণ খেলাপি দেখা গেছে, এই সব গুলোই রাজনৈতিক প্রভাবের সম্ভাব্য প্রতিফলন।
    অতএব দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপহীন, স্বচ্ছ ও পেশাদার কেন্দ্রীয় ব্যাংকই মুদ্রানীতি ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণে কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

    স্বাধীনতা অর্জনের উপায়: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য শুধু আইনি বা কাঠামোগত স্বায়ত্তশাসন যথেষ্ট নয়। রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে ব্যাংককে নীতি গ্রহণ এবং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দিতে হবে, যাতে এটি দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বাজারের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া ব্যাংকের কার্যকর স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। নীতি নির্ধারণ এবং তদারকি প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক চাপ না থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও পেশাদার ও যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

    একই সঙ্গে অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে অটোমেশন ও ক্যাশলেস লেনদেন সম্প্রসারণও গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল লেনদেন এবং স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা দুর্নীতি কমাতে, আর্থিক লেনদেনকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে সাহায্য করে। বর্তমানে বৈশ্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা বাড়াতে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে অটোমেশন এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরিশেষে বলা যায়, আইনি কাঠামো, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আধুনিক প্রযুক্তি একসাথে মিলিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব। রাজনৈতিক চাপমুক্ত এবং প্রযুক্তিনির্ভর একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংকই দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং বাজারের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মূল চাবিকাঠি।

    প্রধান প্রতিবন্ধকতা ও ঝুঁকি: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার প্রক্রিয়া একটি জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ কাজ। এর পথে প্রধান বাঁধা হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাব। অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা বারবার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, যার ফলে মুদ্রানীতি অকার্যকর হয়ে পড়ছে এবং অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

    সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারকে ক্ষমতা ভাগাভাগির মানসিকতা দেখাতে হয়, যা বাস্তবে অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা মানে রাজনৈতিক প্রভাবের পরিধি সংকুচিত করা, এই বাস্তবতা অনেক রাজনীতিক বা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী মেনে নিতে চায় না। ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চেয়ে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

    এছাড়া রাজনৈতিক চাপ ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাব আরেকটি বড় বাঁধা। দেশের অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকায়, তারা প্রায়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে চাপ সৃষ্টি করে বা অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে। এর ফলে ঋণখেলাপি, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মতো সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। এই প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর রাজনৈতিক সংযোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমকে সীমিত করে দেয় এবং এর স্বাধীনতা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে।

    আরেকটি বড় সমস্যা হলো আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দুর্বলতা। বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংক আইন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয় না; অনেক নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল। এই কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে রাজনৈতিক প্রভাব সহজে বলবৎ হয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। ফলে আইন সংস্কার ও শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠন এখন অতীব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    রাজনৈতিক প্রভাব শুধু নীতি প্রণয়নেই নয়, অর্থনৈতিক ঝুঁকি সৃষ্টি করতেও ভূমিকা রাখে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণ, সুদের হার পরিবর্তন বা বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অযৌক্তিক হস্তক্ষেপের কারণে মুদ্রাস্ফীতি, মূল্য অস্থিতিশীলতা, এমনকি কর্মসংস্থান সংকটও দেখা দিতে পারে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তখন দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকির মুখে পড়ে। সবশেষে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরে দুর্বল শাসনব্যবস্থা, স্বচ্ছতার অভাব ও জবাবদিহিতার সংকট তৈরি হয়। ফলে সিদ্ধান্তগুলো প্রায়ই অস্বচ্ছ থেকে যায় এবং আর্থিক বাজারের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষয় হয়।

    অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও টেকসই পথে ফেরাতে হলে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটিয়ে ওঠা জরুরি। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আইনি সংস্কার, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাব প্রতিরোধে দৃঢ় অবস্থান এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক একটি আর্থিক প্রশাসনিক কাঠামো। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও নীতিনির্ভর কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠনই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও স্থিতিশীলতার মূল শর্ত।

    অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন এক কঠিন সময় পার করছে যেমন: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ঋণখেলাপি, ব্যাংকিং খাতের দুর্বল শাসনব্যবস্থা ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পুরো অর্থনীতি চাপে রয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি শক্তিশালী, পেশাদার ও জবাবদিহিমূলক কেন্দ্রীয় ব্যাংকই পারে মুদ্রানীতিকে কার্যকর করতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে।

    নীতিনির্ধারকদের এখন বুঝতে হবে অর্থনীতি বাঁচানোর জন্য রাজনীতি নয়; প্রয়োজন বাস্তববাদী ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা, আইনি সুরক্ষা এবং পেশাদার নিয়োগ নিশ্চিত করা যায়, তবে বাংলাদেশ আবারও স্থিতিশীলতার পথে ফিরবে। পাশাপাশি মিডিয়া, নাগরিক সমাজ ও আর্থিক বিশেষজ্ঞদের সক্রিয় নজরদারিও এই সংস্কারকে টেকসই করবে। অর্থনীতিকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজনীতি থেকে মুক্ত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নয়, এটি আজ সময়ের দাবি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    অর্থনীতি

    দুই শ্রেণির ভোটে ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব শেষ হচ্ছে না

    October 25, 2025
    অর্থনীতি

    উৎপাদন কম, চাপ বেশি: সিমেন্ট কারখানাগুলো ৩০% সক্ষমতায় চলছে

    October 25, 2025
    পুঁজিবাজার

    আইপিও খরার আড়ালে কি চলছে পুঁজিবাজারে?

    October 25, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.