বৈশ্বিক রিয়েল এস্টেট খাত কঠিন সময় পার করছে। উচ্চ সুদহার, ধীর লেনদেন এবং কমে আসা অফিস স্পেসের চাহিদা খাতটিকে বিনিয়োগে কম আকর্ষণীয় করেছে। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে রিয়েল এস্টেটের অংশ ক্রমেই কমছে।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিনিয়োগ পরামর্শক সংস্থা হোডস উইল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের যৌথ জরিপে অংশ নিয়েছে ১৬৬ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। দেখা গেছে, চলতি বছর রিয়েল এস্টেট খাতে গড় বিনিয়োগ বরাদ্দ নেমে এসেছে ১০.৭ শতাংশে। ২০১৩ সালের পর এটি প্রথমবার, যখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পোর্টফোলিওতে রিয়েল এস্টেটের বরাদ্দ কমিয়েছেন।
আর্থিক পরামর্শক সংস্থা ক্যাম্পবেল লুটিয়েন্সের আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা রিয়েল এস্টেট ফান্ড গড়ে ৩৪ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এটি গত বছরের গড় ১৯ শতাংশ ছাড়ের তুলনায় অনেক বেশি। সেকেন্ডারি মার্কেটে রিয়েল এস্টেট ফান্ডের বিক্রিও কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ সুদ ও ধীর লেনদেনের কারণে নগদ প্রবাহ কমে যাওয়ায় খাতটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন সবচেয়ে কম লাভজনক। হোডস উইলের কো-ম্যানেজিং পার্টনার ডগ উইল বলেন, “বিনিয়োগকারীরা পিছু হটছে না, তবে স্পষ্টভাবে হোঁচট খাচ্ছে।”
এর আগে রিয়েল এস্টেট খাতকে পেনশন ফান্ড, ইউনিভার্সিটি এন্ডাওমেন্ট ও বীমা কোম্পানি স্থিতিশীল আয়ের উৎস হিসেবে দেখত। মূল্যস্ফীতি হেজ হিসেবে বিনিয়োগের চাহিদাও ছিল। কিন্তু ধীর লেনদেন, মূল্য হ্রাস এবং কমে আসা অফিস চাহিদা খাতটিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
বিশ্বব্যাপী সুদ দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ থাকায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পদ বিক্রি ধীর হয়েছে। রিমোট ও হাইব্রিড কাজের কারণে অফিস স্পেসের চাহিদা রেকর্ড নিম্ন পর্যায়ে। ফলে রিয়েল এস্টেট খাতের লেনদেন ও ভাড়া আয় কমেছে।
টেক্সাসের টিচার রিটায়ারমেন্ট সিস্টেমের রিয়েল এস্টেট বিভাগের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গ্রান্ট ওয়াকার বলেছেন, “চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে খাতটি ২.৬ শতাংশ লোকসান দিয়েছে, যা মোট রিটার্নে বড় প্রভাব ফেলেছে।”
জরিপে দেখা গেছে, গত বছর রিয়েল এস্টেটে গড় মুনাফা হয়েছে ১.৪ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রা ৮.৪ শতাংশের তুলনায় কম। চলতি বছর বিনিয়োগকারীদের অনেকেই বরাদ্দকৃত হারের তুলনায় কম বিনিয়োগ করেছেন। খাতের নগদ প্রবাহ কমে যাওয়ায় গড় রিটার্ন এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ৬.৬ শতাংশে নেমেছে, রেকর্ড সর্বনিম্ন।
নতুন বিনিয়োগের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেকেন্ডারি মার্কেট ব্যবহার করছেন। এক ইউনিভার্সিটি এন্ডাওমেন্টের নির্বাহী জানান, “পোর্টফোলিও পুনর্বিন্যাস ও নগদ অর্থ—দুটোই খুব প্রয়োজন।” এ কারণে বিক্রেতাদের বড় ছাড় দিতে হচ্ছে।
বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, স্বল্পমেয়াদে খাতে দ্রুত পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নেই। বড় ছাড়ে সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতি কাটানোর চেষ্টা চলছে।

