দেশের শহর ও নগরের সুযোগ-সুবিধা উন্নয়নের অংশ হিসেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ২০২৭ সালে দুইটি পৃথক প্রকল্পে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের পরিকল্পনা করেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা বাসসকে জানান, ম্যানিলা-ভিত্তিক এডিবি ২০২৭ সালে ক্লাস্টার টাউনস ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করতে যাচ্ছে। উপকূলীয় ২২টি শহরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই)। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নজর দেওয়া। বর্তমানে উপকূলীয় শহরগুলোর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন অবকাঠামোর ওপর একটি সমীক্ষা চলছে। ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, “এই সমীক্ষায় পানির উৎস, পরিশোধন সুবিধা, বিতরণ নেটওয়ার্ক এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার অবস্থা বিবেচনা করা হচ্ছে।”
এছাড়া, ২০২৭ সালে ৩য় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশকে আরও ১৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ ও অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ সিটি রিজিয়ন (এমসিআর) ও রাজশাহী সিটি রিজিয়ন (আরসিআর) নির্বাচিত হয়েছে ৩য় সিটি রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের জন্য।
ইআরডি কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের আওতায় থাকবে টেকসই আরবান ড্রেনেজ ব্যবস্থা, যেখানে প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া নাগরিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়ন হবে—যেমন সড়ক, বাস টার্মিনাল, কমিউনিটি মার্কেট ও কাঁচাবাজার। উদ্ভাবনী অর্থায়ন ব্যবস্থা এবং পৌর প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধিও হবে। এর মাধ্যমে জলবায়ু ও দুর্যোগ সহনশীলতা, অংশগ্রহণমূলক নগর পরিকল্পনা এবং টেকসই সেবা প্রদানের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে এমসিআর ও আরসিআর-এর জন্য সমন্বিত সিটি রিজিয়ন পরিকল্পনা (সিসিআরপি) এবং সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন নির্দেশিকা প্রণয়নের সহায়তাও প্রদান করা হবে। এতে আঞ্চলিক সংযোগ, উৎপাদনশীল সংযোগ, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো অতিরিক্ত থিম্যাটিক স্তর অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
পটুয়াখালী ও খুলনার প্রকল্প পরিদর্শনের সময় এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বাসসকে বলেন, সিটি রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট পরিকল্পনা চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, “এটি প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপ। তবে আমরা ইতিমধ্যে এলজিইডির সঙ্গে পরবর্তী ধাপের প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। প্রকল্পের ভৌগোলিক এলাকা ও উপ-প্রকল্প নিয়ে এখনো সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এডিবি দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার। গত অর্থবছর (২০২৪-২৫) ২.৫২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে এবং ২.০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এডিবির বর্তমান প্রকল্প পোর্টফোলিও প্রায় ১১.৮ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৫১টি প্রকল্প চলমান। ১৯৭৩ সাল থেকে এডিবি বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, পানি সম্পদ ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশকে মোট ৩৩.৯৫১ বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ৫৭১.২ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে।

