বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) সম্প্রতি নতুন দুটি সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের মধ্যে একটি বুঝে নিয়েছে। জাহাজটি বুঝে নেওয়ার মাত্র চার দিন পরে, আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) থেকেই হংকংভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া শুরু হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন ভাড়া বাবদ বিএসসি পাচ্ছে ২০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকার সমান।
নতুন এই জাহাজের নাম এমভি বাংলার প্রগতি। এটি প্রায় ১৯৯ মিটার দীর্ঘ এবং ৬৩ হাজার ৭৭৭ টন পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা রাখে। আজ সকালে চীনের জিংজিয়াং ইন্টারন্যাশনাল বার্থ থেকে জাহাজটি ঝুশানের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। ঝুশান থেকে এটি তেলসহ অন্যান্য পণ্য বোঝাই করার জন্য আরেকটি বন্দরে যাবে।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক জানিয়েছেন, “বৃহস্পতিবার আমরা জাহাজটি চীনের ইয়ার্ড থেকে বুঝে নিয়েছি। বুঝে নেওয়ার পরপরই এটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ভাড়া বাবদ আমাদের দৈনিক ২০ হাজার ডলার আয় হবে।”
নতুন জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত জুনে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি থেকে ৯৩৬ কোটি টাকায় দুটি জাহাজ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করে। সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হয়।
নতুন দুটি জাহাজের মধ্যে আরও একটি, এমভি বাংলার নবযাত্রা, আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিএসসির বহরে যুক্ত হওয়ার কথা। বর্তমানে বিএসসির বহরে মোট ৫টি জাহাজ রয়েছে—৩টি তেল পরিবহনের ট্যাংকার এবং ২টি সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ। নতুন দুটি জাহাজের একটি যুক্ত হওয়ায় বহর ৬টিতে পৌঁছাবে।
১৯৭২ সালে ‘এমভি বাংলার দূত’ দিয়ে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের কাজ শুরু করে বিএসসি। পরবর্তী সময়ে বহর বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮টি পর্যন্ত পৌঁছায়। তবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে চীন সরকারের অর্থায়নে নেওয়া ৬টি জাহাজের মধ্যে একটি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে বিএসসির বহর বর্তমানে ৫টি জাহাজে সীমাবদ্ধ।
তবে বেসরকারি মালিকানাধীন জাহাজ সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতে ৯৫টি জাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে কেএসআরএম গ্রুপের ২৮টি, মেঘনা গ্রুপের ২৫টি এবং আকিজ শিপিংয়ের ১০টি জাহাজ রয়েছে। এই হিসাবে বিএসসি বেসরকারি খাতের তুলনায় ষষ্ঠ অবস্থানে আছে।
নতুন জাহাজ ভাড়া দিয়ে বিএসসি কেবল আয় বাড়াচ্ছে না, বরং সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন সক্ষমতাও বাড়াচ্ছে, যা দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।

