পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেছেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে পিছিয়ে আছে। দেশে এখনো কোনো জাতীয় বিনিয়োগ নীতি নেই। ফলে বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য ও পরিকল্পনা করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে একটি পদ্ধতিগত বিনিয়োগ উন্নয়ন কৌশল থাকা উচিত। এটি জাতীয় বাণিজ্য, রপ্তানি ও আমদানি নীতির সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ইকোনমিক রিফর্ম সামিটে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভয়েস ফর রিফর্ম, ব্রেইন, ইনোভিশন কনসাল্টিং, ফিনটেক সোসাইটি ও নাগরিক কোয়ালিশন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য মনজুর হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র নকিবুর রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ, হিসাববিদ স্নেহাশীষ বড়ুয়া, কাউন্টারপার্টের নির্বাহী সম্পাদক জ্যোতি রহমান এবং চালডালের সিইও ওয়াসিম আলিম।
প্যানেল আলোচনায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, “আমরা বর্তমানে তীব্র জ্বালানি সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরে নিজস্ব জ্বালানি উৎস কাজে লাগাতে বিনিয়োগ হয়নি। বরং বিনিয়োগ হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনে। এই ১৫ বছরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। কারণ, এখানেই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির সুযোগ ছিল।”
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেছেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে এবং দারিদ্র্য বেড়েছে। ইতোমধ্যে বলা হচ্ছে, আরও ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। তিনি জানান, ১৩ লাখ তরুণ-তরুণী বেকার, আর স্নাতক পর্যায়ে প্রতি তিনজনের একজন কর্মহীন। রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর আরও বলেন, “বাংলাদেশ এখন ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে। হয় আমরা এই স্থবিরতা মেনে নেব, না হলে অভূতপূর্ব সমৃদ্ধির পথে এগোতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন নতুন অর্থনৈতিক মডেল।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা হবে। এই বিভাগ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে তৈরি করা হয়েছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল এমডি নিয়োগ ও পর্ষদে পছন্দের লোক বসিয়ে লুটপাট করা। আগেরবার ক্ষমতায় এসে বিএনপি এটি তুলে দিয়েছিল, কিন্তু শেখ হাসিনা আবার চালু করেছেন। ক্ষমতায় এলে বিএনপি পুনরায় এটি বিলুপ্ত করবে। তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতে সংস্কার এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। শুধু স্বায়ত্তশাসন যথেষ্ট নয়। এছাড়া বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কার করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই ভাগ করা নিয়ে আমীর খসরু প্রশ্ন তুলেছেন, এতে কী লাভ হবে। তার ধারণা, কোনো লাভ হবে না কারণ দুই ভাগেই আমলারা আছেন। বিএনপির পরিকল্পনা অনুযায়ী এনবিআর নিয়ে ভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমলাতন্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্ষমতায় এলে বিএনপি আমলাতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করবে না। বরং দায়িত্ব কমানো হবে এবং সরকার পরিচালনার সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হবে। নীতিনির্ধারণের দায়িত্ব আমলাদের হাতে নয়, নীতিনির্ধারকদের হাতে থাকবে।
মূল অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দাবিদাওয়া বা সংস্কারের প্রয়োজনে রাস্তায় নয়, জনগণের দুয়ারে যেতে হবে। তিনি বলেন, “আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে এসে পাস করিয়ে নিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সহনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে, অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। দ্বিমত থাকলেও পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে হবে।”

