নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে তিন দিনব্যাপী ‘ফিনটেক কনফারেন্স’ আয়োজন করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফিনটেকবিডি ডট ইউকে লিমিটেড। এ আয়োজনে দেশের সব ব্যাংককে অংশগ্রহণ ও স্পন্সর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস বাংলাদেশ (বিএবি)।
বিএবির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকারের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়েছে—দেশের ব্যাংকিং খাতকে আরও শক্তিশালী ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে এই কনফারেন্স আয়োজন করা হচ্ছে। এজন্য ব্যাংকগুলোকে অংশগ্রহণ ও স্পনসরশিপের মাধ্যমে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।
ফিনটেকবিডি ডট ইউকে লিমিটেড বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে সম্মেলন আয়োজনের অনুমোদন পেয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির অন্য কোনো দেশে এ ধরনের সম্মেলন আয়োজনের অভিজ্ঞতা নেই। বাংলাদেশই হতে যাচ্ছে তাদের প্রথম আয়োজনের স্থান। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ফিনটেকবিডি ইউকের প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছে। আগামী সপ্তাহে আরও কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
বিডার এক চিঠিতে বলা হয়েছে, এ সম্মেলনের জন্য কোনো আর্থিক সহায়তা দেবে না সংস্থাটি। প্রয়োজনীয় তহবিলের পুরো দায়িত্ব নিতে হবে ফিনটেকবিডি ইউকেকে। বিডার নাম বা লোগো প্রচারণায় ব্যবহার করা যাবে, তবে তা যেন কোনো আর্থিক সহায়তার ইঙ্গিত না দেয়। এছাড়া বিডার নাম বা লোগো ব্যবহারের আগে লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, কনফারেন্স সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে বিডা কোনো দায় নেবে না— এমনকি ফিনটেকবিডি যদি কোনো তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তবুও নয়।
বিডার পরিচালক ও ডেপুটি সেক্রেটারি মো. সিরাজুল ইসলাম খান বলেন, “বিডার চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদনের জন্য বলেছেন, তাই অনুমোদন দিয়েছি। তবে বিডা কোনো আর্থিক সহায়তা দেবে না।” অন্যদিকে, বিএবির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, “আমি ওদের সম্পর্কে খুব বেশি জানি না। একজন পরিচিত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটির কথা বলেছিল। পরে তারা দেখা করতে এসেছিল। শুনেছি প্রতিষ্ঠানটি ভালো।”
বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক ও ফিনটেকবিডির বক্তব্য:
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, “যুক্তরাজ্যভিত্তিক কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তা বাংলাদেশে ফিনটেক খাতে কাজ শুরু করতে চায়। তারা বিডা’র অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকও সেই অনুমোদন দিয়েছে। তবে এই কনফারেন্সে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো আর্থিক অংশগ্রহণ করবে না।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “দেশে ফিনটেক কনফারেন্স হওয়া ইতিবাচক। তবে অনুমোদন দেওয়া উচিত এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য, যাদের সুনাম আছে এবং আস্থার সঙ্গে কাজ করছে।” আরেক বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য করেন, “আমরা প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই-বাছাই করব। মানসম্মত ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলে স্পন্সর করব। তবে ক্রেডিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বিনিয়োগ করব না।”
অন্যদিকে ফিনটেকবিডি ইউকে লিমিটেডের প্রতিনিধি মো. আনোয়ারুল হক বলেন, “তিন দিনব্যাপী কনফারেন্সে দেশি ও বিদেশি স্পিকাররা অংশ নেবেন। আলোচনার মূল বিষয় হবে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ ও ‘ডিজিটাল ব্যাংকিং’। বাংলাদেশে প্রথমবার এই ধরনের কনফারেন্স হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, “কনফারেন্স আয়োজন হবে নিজেদের তহবিল ও স্পন্সরের মাধ্যমে। ইউকে হাই কমিশন বিডাতে রেফার করেছে। আমরা বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল সার্ভিস কোম্পানিকে ফিনটেক তৈরি করার ক্ষেত্রে কনসালটেন্টি সেবা দেই।”
এতে স্পষ্ট হয়, ফিনটেক কনফারেন্স আয়োজনের উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিকভাবে যুক্ত নয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলো স্পন্সর হওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করবেন। আয়োজক প্রতিষ্ঠান নিজের তহবিল ও স্পন্সরের মাধ্যমে কনফারেন্স পরিচালনা করবে।

