দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহিম খান। গতকাল রবিবার সকালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে ট্রেড অর্গানাইজেশন অ্যাক্ট, ২০২২-এর ধারা ১৭ অনুযায়ী তার এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১২০ দিনের মধ্যে তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত বোর্ডের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।
এক বছরের বেশি সময় এফবিসিসিআই নেতৃত্বশূন্য ছিল। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতৃত্বের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা হলেও, নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর পর প্রশাসকের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। দেড় মাস পদ শূন্য থাকার পর নতুন করে একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
নির্বাচন সংক্রান্ত বিতর্ক ও আর্থিক বিষয় নিয়ে একাধিক ব্যবসায়ী উচ্চ আদালতে রিট মামলা করেছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সীমিত, চাঁদার হার বেশি এবং মনোনীত পরিচালক নির্বাচন প্রক্রিয়া যথাযথ নয়—এসব দাবিতে চারটি রিট মামলা চলছে। দুই দফায় নির্বাচন বোর্ড পুনর্গঠন করেও নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা সংশোধন ছাড়া এই জট অচলাবস্থা কাটবে না। দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব না থাকার কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কথা বলার জায়গা নেই। দেড় মাস প্রশাসক পদ শূন্য থাকায় ফেডারেশনের মতিঝিল কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কমেছে।
নির্বাচনের তারিখ এখনও অনিশ্চিত হলেও কিছু ব্যবসায়ী সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রচার শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ, সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাবেক পরিচালক মো. পারভেজ সাজ্জাদ আক্তার ও বাংলাদেশ সিএনজি যন্ত্রপাতি আমদানিকারক সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন। সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। তাদের কথা বলার কোনো জায়গা নেই। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে নিতে হলে দ্রুত নির্বাচন করতে হবে। তবে তার আগে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা সংশোধন জরুরি।
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সরকার নিযুক্ত প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে একটি সহায়ক কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্য আবুল কাশেম হায়দার জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যর্থতায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। এখন দ্রুত বিধিমালা সংশোধন করে নির্বাচন আয়োজন করা প্রয়োজন। সাধারণ পরিষদের সদস্যদের দাবিতে গঠিত বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ মনোনীত পরিচালক প্রথা বাতিল ও পর্ষদের সদস্যসংখ্যা কমানোসহ ১২টি সংস্কার প্রস্তাব পাঠায়। মে মাসে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা চূড়ান্ত হলেও প্রশাসকের আট মাস মেয়াদ চলে যায়।
নতুন বিধিমালা জারি হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়। ১৮ জুন তফসিল ঘোষণা করা হয়। তবে ব্যবসায়ীদের দাবিতে নির্বাচনের সময় ৪৫ দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। মামলার কারণে নির্বাচন বন্ধ নয়। নতুন প্রশাসক নির্বাচন বোর্ড পুনর্গঠন করে প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পারবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্বাচন ও আপিল বোর্ড গঠন বেআইনি অভিযোগে, নিবন্ধন ফি বৃদ্ধি এবং মনোনীত পরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে ব্যবসায়ীরা রিট করেন। সাবেক প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, মামলা চললেও নির্বাচন করা যায়। বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা সংশোধনের প্রক্রিয়াও চলমান।

