রাজধানীর উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের জুলাই মাসে। শুরুতে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। প্রথমে খরচ ধরা হয়েছিল ৩৭ কোটি টাকা, কিন্তু কাজের অগ্রগতি অনুপস্থিত থাকায় প্রকল্প পাঁচবার সংশোধন করা হয়। খরচ বেড়ে যায় দ্বিগুণেরও বেশি, এখন ১৪৩ শতাংশ।
প্রকল্প শেষ হওয়ার আগের নির্ধারিত সময় ছিল গত জুন, কিন্তু এখনও ৩৫ শতাংশ কাজ বাকি। তাই আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে এক বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এই সময় বৃদ্ধি অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল। প্রধান কাজ ছিল ০.৯৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ দেওয়া। এছাড়া ৪ হাজার ১৭০ মিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং ৬২ হাজার ১৩ ঘনমিটার মাটি ভরাট করা। উদ্দেশ্য ছিল লেককে দখল থেকে রক্ষা করে চারপাশে হাঁটার সুবিধা তৈরি করা এবং ডাইভারশন ড্রেনেজের মাধ্যমে দূষণ কমানো। এছাড়া মহানগরীর সৌন্দর্য ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
তবে গত ১১ বছরে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৬৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬২.৬৫ শতাংশ। বাকি ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে বাধ্য হয়ে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জানিয়েছে, বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ করতে হলে শর্ত মেনে চলতে হবে। এরপর আর মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। প্রকল্পের ধীরগতির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে অতিবৃষ্টি, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, এলাকায় দুটি মসজিদ, দিনে ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকা, জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় প্যালাসাইডিংয়ে বিলম্ব এবং বস্তি উচ্ছেদ সমস্যা।
প্রকল্পের খরচ শুরুতে ধরা হয়েছিল ৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল ১১ কোটি ৮৮ লাখ, আর রাজউকের নিজস্ব তহবিল ২৫ কোটি ৪৪ লাখ। কাজ শেষ করার জন্য মেয়াদ শুরুতে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি। এরপর চারবার এক বছর করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০২০ সালের জুনে খরচ বেড়ে হয় ৯০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
আইএমইডি সূত্র জানায়, মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে মোট ৮টি শর্ত রয়েছে। কাজ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে। এরপর আর মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। সমাপ্ত প্রকল্প প্রতিবেদন (পিসিআর) তিন মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে। লেকের কাজ মানসম্পন্ন ও স্থায়িত্বপূর্ণ করতে নজর দিতে হবে। যথাসময়ে এডিপিতে বরাদ্দ রাখতে হবে। দরপত্র আহ্বান ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবছরের অডিট কার্যক্রম ও নিয়মিত পিআইসি ও পিএসসি সভা চালাতে হবে। সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইএমইডিকে জানাতে হবে।
অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর উন্নয়ন কাজে অনেক আশা ছিল। কিন্তু এখনও প্রকল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন নেই। ১১ বছরে মাত্র ৬৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাকি ৩৫ শতাংশ এক বছরে করা যাবে কি, তা বলা কঠিন। বারবার সংশোধনের ফলে খরচ বাড়ছে। জনগণের করের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।’
প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মো. মোবারক হোসেন জানান, ‘বিভিন্ন কারণে কাজ ধীরগতিতে চলছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি বেড়ে হয়েছে ৬৮ শতাংশ। বাকি আছে তীর সংরক্ষণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ কিছু আনুষঙ্গিক কাজ। এক বছরের মেয়াদ বাড়ানোর ফলে আশা করি কাজ শেষ হবে।’

