গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী’ প্রথম বছরেই বিদেশি বিনিয়োগে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ—যা রাজনৈতিক অস্থিরতার পর সাধারণত দেখা যায় না।
বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক দশকে যেসব দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন বা গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, তাদের বেশিরভাগই বিনিয়োগ হ্রাসের মুখে পড়ে। যেমন, শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ, চিলিতে ১৬ শতাংশ, সুদানে ২৭ শতাংশ, ইউক্রেনে ৮১ শতাংশ, আর মিশরে ১০৭ শতাংশেরও বেশি। এমন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের এই উল্টো ধারা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিশ্লেষকদের দৃষ্টি কাড়ছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন,
“বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো—সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা। গণঅভ্যুত্থানের মতো ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পরও বিনিয়োগ বাড়া প্রমাণ করে যে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশকে আরও বেশি স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও বেসরকারি খাত একসঙ্গে কাজ করছে বলেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে, তবে সদিচ্ছার ঘাটতি নেই।”
বিডা জানিয়েছে, শিগগিরই ২০২৫ সালের পুরো সময়ের একটি বিস্তারিত ‘বিনিয়োগ রিপোর্ট কার্ড’ প্রকাশ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে—
- 
২০২১ সালে এফডিআই ছিল ৪৮৮.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার
 - 
২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৬৭০.৭ মিলিয়ন ডলার
 - 
২০২৩ সালে বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৯২৪.৪ মিলিয়ন ডলারে
 - 
২০২৪ সালে সামান্য হ্রাস পেয়ে ৬৭৬.৬ মিলিয়ন ডলার
 - 
আর ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই তা লাফিয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০৯২.৯ মিলিয়ন ডলারে
 
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি এখন বাংলাদেশের প্রধান শক্তি। তারা মনে করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দুই বছরে এফডিআই আরও বড় পরিসরে বাড়বে।
এক অর্থনীতিবিদের ভাষায়, “গণঅভ্যুত্থানের পর যেখানে অনেক দেশ বিনিয়োগে ধস নামে, বাংলাদেশ সেখানে উল্টো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি আন্তর্জাতিক আস্থার এক নতুন সূচনা।”

