সরকার পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের পূর্ণাঙ্গ মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে উন্নীত করতে তিন বছরের জন্য ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয় করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১ হাজার করা হবে।
হাসপাতালের জন্য ১৫ হাজার আসবাবপত্র কেনা হবে এবং সব ডাক্তারদের মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়ন করা হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে প্রকল্পটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
পাবনা মানসিক হাসপাতাল একটি পুরনো প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৭ সালে শীতলাই হাউস নামে জমিদার বাড়িতে এটি অস্থায়ীভাবে স্থাপিত হয়। ১৯৫৯ সালে জেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটারের দূরে হেমায়েতপুরে ১৩২ একর জমির ওপর স্থায়ীভাবে হাসপাতালটি স্থানান্তরিত হয়। প্রথমে শয্যা সংখ্যা ছিল ৫০। বিভিন্ন সময়ে বাড়ানো হলেও সর্বশেষ ২০০০ সালে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে ২৮০টি নন-পেয়িং, ১২০টি পেয়িং এবং ১০০টি প্রকল্পভিত্তিক শয্যা রয়েছে। সময়ের সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলেও শয্যা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা এবং আবাসন প্রয়োজনের তুলনায় কম।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠালে ২০২৪ সালের ৪ জুলাই পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু খাতে খরচ কমানোসহ সংশোধনের পরামর্শ দেওয়া হয়। পরবর্তী বছর ২৩ সেপ্টেম্বর সংশোধিত ডিপিপি জমা হয়। এরপর ৬ অক্টোবর পরিকল্পনা উপদেষ্টা একনেকে উপস্থাপনের অনুমোদন দেন। ২১ অক্টোবর একনেক সভায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস প্রকল্পটি অনুমোদন করেন।
বর্তমান হাসপাতালের অবকাঠামো চাহিদা পূরণে অপ্রতুল। বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ, বৃত্তিমূলক ও বিনোদনমূলক চিকিৎসা বিভাগের পাশাপাশি এক্স-রে, প্যাথলজি, ইসিজি ও ইইজি ছাড়া অন্য আধুনিক সুবিধা নেই। একতলা, দোতলা ও তিনতলা কয়েকটি ভবন থাকলেও বহুতল ভবনের অভাবে আবাসন ও আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা অপর্যাপ্ত।
এই কারণেই হাসপাতালকে বিশ্বমানের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে ১ হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এর জন্য ১৭ হাজার বর্গমিটারের ৬তলা বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ, ৩৫ হাজার বর্গমিটারের ৬তলা ওয়ার্ড কমপ্লেক্স, ২৭ হাজার ৬৬৬ বর্গমিটারের একাডেমিক ভবন, ৪ হাজার ৫৮৯ বর্গমিটারের পেশেন্ট এটেনডেন্ট হোস্টেল এবং চিকিৎসক ও কর্মীদের জন্য ৮ তলা বিশিষ্ট চারটি ভবন নির্মাণ করা হবে।
শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য দুইটি হোস্টেল, ডক্টরস ডরমেটরি ও নার্সেস ডরমেটরি ভবন তৈরি হবে। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ৩ হাজার বর্গমিটার বিদ্যালয়, ৬ হাজার ৪৮৫ বর্গমিটার কেবিনও সার্ভিস ব্লক, ২ হাজার ৩৮৯ বর্গমিটারের মসজিদও নির্মাণ করা হবে। এসবের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৯৭ কোটি, আসবাবপত্রে ২৫ কোটি এবং ১৪২টি অফিস সরঞ্জাম কিনতে ৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। শিক্ষাগত ও গবেষণা কার্যক্রমে খরচ হবে মোট ১ হাজার ৩৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
প্রকল্প অনুমোদনের পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল একটি পুরনো, বিশাল জায়গার প্রতিষ্ঠান। জুলাইয়ের ছাত্র-ছাত্রী অভ্যুত্থানের পর আমরা মানসিক চিকিৎসার বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি। তখনই হাসপাতাল উন্নয়নের পরিকল্পনা শুরু হয়।’
পরিকল্পনা কমিশনের মতে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও টেলিমেডিসিন চালু করা, কমিউনিটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং যোগ্য, প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলা। ৫০ কোটি টাকার বেশি হওয়ায় প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়।

