সরকারের ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে, আর সুদ পরিশোধের চাপও ততটাই বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ঋণ ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা বাড়াতে এবং ব্যয় হ্রাস করতে সরকারের ভাবনা হচ্ছে একটি একীভূত, স্বতন্ত্র ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় গড়ে তোলা। এই উদ্যোগে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সম্প্রতি এই দুই সংস্থার যৌথ কারিগরি মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। মিশনটি অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে স্বতন্ত্র ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি জনপ্রশাসনের বিদ্যমান কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন না আনা হয়, তাহলে নতুন এই সংস্থা খুব বেশি সুফল আনতে পারবে না।
মিশনটির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বিভিন্ন সংস্থায় বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এতে ঋণের তথ্য অপ্রতিসম এবং সমন্বয়ের ঘাটতি দেখা দেয়, যা একটি সমন্বিত ঋণ কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি করছে। দেশজুড়ে কোনো কেন্দ্রীয়, নিরীক্ষিত ঋণ ডাটাবেজ নেই, এবং নগদপ্রবাহের পূর্বাভাস ব্যবস্থাও অপর্যাপ্ত।
প্রস্তাবিত ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় অর্থ বিভাগের অধীনে ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা উইংকে পুনর্গঠন করে প্রথম পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করবে। এর দায়িত্ব হবে অভ্যন্তরীণ ঋণ ইস্যু তদারকি, বার্ষিক ঋণ পরিকল্পনা তৈরি, ট্রেজারি বিল ও বন্ড নিলামের সমন্বয়, ঋণ পোর্টফোলিও ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং একীভূত ঋণ ডাটাবেস গঠন। মিশনের পরামর্শ অনুযায়ী, এ কার্যালয় পরিচালনার জন্য পুঁজিবাজার, ব্যাংকিং ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষ জনবল আনা হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করাচ্ছেন, শুধুমাত্র নতুন সংস্থা তৈরি করলেই কাজ হবে না; সরকারের বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামো ও নীতি সংস্কার করতে হবে। সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, “বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে দক্ষ জনবল আনা এবং তাদের ধরে রাখা কঠিন। তাই নতুন কার্যালয় কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি এবং স্বতন্ত্র ক্ষমতা প্রয়োজন।”
বর্তমানে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনায় একাধিক সংস্থা জড়িত। অভ্যন্তরীণ ঋণ নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, বিদেশী ঋণের জন্য দায়িত্বে আছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কার্যক্রমের কারণে কার্যকরী সমন্বয় অভাব হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে দেশের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ কোটি টাকায়। এর মধ্যে দেশী ঋণ ১০ লাখ ২১ হাজার ৭২৯ কোটি এবং বিদেশী ঋণ ১২ লাখ ৭৮ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এই বিশাল ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের জন্য একীভূত কার্যালয় গঠনের উদ্যোগকে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণের দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

