বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণশক্তি পোশাক রপ্তানি এবার টানা তিন মাস ধরে হ্রাস পাচ্ছে। জুলাইতে বছরের শুরুতে ভালো সূচনার পর আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে রপ্তানি কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে দেশের সামগ্রিক রপ্তানিতেও।
ইপিবি (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো) জানায়, আগস্টে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৪.৭৫ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৬৬ শতাংশ, এবং সর্বশেষ অক্টোবর মাসে কমেছে ৮.৩৯ শতাংশ। একই সঙ্গে দেশের সার্বিক রপ্তানি আয়ে অক্টোবরেই ৭.৪৩ শতাংশ হ্রাস হয়েছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫.৩৩ শতাংশ, আর নিট পোশাকের রপ্তানি কমেছে ১০.৭৬ শতাংশ। উদাহরণস্বরূপ, গত অর্থবছরের অক্টোবরে ওভেন পোশাকের রপ্তানি হয়েছিল ১৪৩ কোটি ডলার, যা এ বছর ১৩৬ কোটি ডলারে নেমেছে। নিট পোশাকের ক্ষেত্রেও একই ধারা—গত বছরের অক্টোবরের ১৭২ কোটি ডলারের তুলনায় এ বছরের অক্টোবরে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ১৬৩ কোটি ডলার।
সেপ্টেম্বরে ও আগস্টেও একই ধারা ছিল। সেপ্টেম্বরে ওভেন পোশাকের রপ্তানি কমেছে ৫.৫৪ শতাংশ, নিট পোশাক কমেছে ৫.৭৫ শতাংশ। আগস্টে ওভেন ও নিট পোশাকের রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ২.৬৫ শতাংশ ও ৬.৩৪ শতাংশ।
ব্যবসায়ীদের মতে, মার্কিন শুল্ক নতুন অর্ডারের ক্ষেত্রে সঙ্কোচ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, আগের মতো ১০ পিস পোশাক অর্ডার করা হচ্ছিল, এখন সেটি কমে ৫ পিস হয়ে গেছে।
বিজিএমইএ পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, “মার্কিন শুল্ক ও ক্রয়ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে রপ্তানি কমেছে। পাশাপাশি চীনা ও ভারতীয় প্রস্তুতকারকরা কম দামে ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করছে, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।”
বিকেএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, “দেশের সার্বিক অনিশ্চয়তার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা নতুন অর্ডার দিতে দ্বিধাগ্রস্ত। এই পরিস্থিতি সামনেও আরও সংকটের সৃষ্টি করতে পারে। তবে যদি ক্রেতারা নতুন শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে।”
বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ও শুল্ক প্রভাবের কারণে পোশাক খাতকে এই দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তবে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের নতুন নীতি ও বাজারের সঙ্গে মানিয়ে নিলে ধীরগতির এই সংকট অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখনও দেশের রপ্তানির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এই খাতের স্থিতিশীলতা অর্থনীতিকে সমর্থন দেয়, তাই শুল্ক নীতি, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা ও প্রতিযোগিতার সঙ্গে মানিয়ে চলাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

