শীতের আগাম মৌসুমি সবজির বাজারে এখন কিছুটা স্বস্তি। দামও মোটামুটি নাগালের মধ্যে। আগের মাসে যেভাবে চালের দাম বেড়েছিল, নতুন করে তা আর বাড়েনি। অন্যান্য সেবার মাশুলও প্রায় অপরিবর্তিত।
সরকারি সংস্থা পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই চিত্র ফুটে উঠেছে। হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অক্টোবর মাসে আগের মাসের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে অক্টোবরের মূল্যস্ফীতি ৮.১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। সেপ্টেম্বরে এটি ছিল ৮.৩৬ শতাংশ।
বিবিএস গতকাল বুধবার এই তথ্য প্রকাশ করেছে। সংস্থা প্রতি মাসে মাঠ পর্যায় থেকে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম সংগ্রহ করে। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) তৈরি করা হয়। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি বোঝায়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দাম কতটা বেড়েছে। ১২ মাসের চলন্ত গড় হিসাবেই বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি নিরূপণ করা হয়।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে। মাসটিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭.০৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৭.৬৪ শতাংশ। গ্রাম ও শহর উভয় অঞ্চলেও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিতে কমতির লক্ষণ দেখা গেছে। অন্যদিকে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অক্টোবর মাসে এটি দাঁড়িয়েছে ৯.১৩ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৮.৯৮ শতাংশ।
২০২১-২২ অর্থবর্ষকে ভিত্তি বছর ধরে হিসাব করা হয়েছে। ভোক্তা মূল্যসূচকে ৩৮৩ আইটেমের ৭৪৯ ধরনের পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মদ, সিগারেট, বেভারেজ, নেশাজাতীয় দ্রব্য, সন্তানের শিক্ষা, পরিবারের ইন্টারনেট ব্যবহার, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে খাবারের খরচ। সারাদেশের ৬৪টি জেলার ১৫৪টি হাটবাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রতি মাসের সিপিআই নিরূপণ করা হয়।
জাতীয়ভাবে অক্টোবর মাসে মূল্যসূচক কমলেও শহরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮.৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৮.২৮ শতাংশ। গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮.১৬ শতাংশ, আগের মাসে যা ছিল ৮.৪৭ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের দিক থেকে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে গ্রামে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে ৬.৯৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৭.৫৪ শতাংশ। শহরে একই সময়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৭.৪৫ শতাংশ, আগের মাসে যা ছিল ৭.৯৪ শতাংশ।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু পণ্যের দাম কমেছে। এটি হয়তো মূল্যস্ফীতির হিসাবেও প্রতিফলিত হয়েছে। তবে বেশির ভাগ পণ্যের দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়েও মানুষের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার যেন এ বিষয়ে কোনো অবহেলা না করে। পণ্যের দাম সহনীয় করতে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে এবং বাজার তদারকি আরও শক্তিশালী করতে হবে।

