মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার মান কমার ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৩ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এটি মোট ১১.৮৪ শতাংশ বৃদ্ধি। প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পের নতুন মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা।
২০১৬ সালের মূল প্রস্তাবে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার ঋণ ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলারের হিসাবে অপরিবর্তিত থাকলেও, বাংলাদেশি মুদ্রায় তা বেড়ে হয়েছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি থেকে ১ লাখ ৪ হাজার ৪ কোটি টাকা। শুধুমাত্র বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বেড়েছে ১২ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা।
সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ৮.২৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। তখন প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮০ টাকা। পরবর্তী তিন বছরের জন্য অবশিষ্ট ৩.০৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১২২ টাকা, যা ২০২৫ সালের ১২ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত।
সরকারের নিজ তহবিল থেকে ব্যয় মূল পরিকল্পনায় ধরা হয়েছিল ২২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবে এটি বেড়ে ২২ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। মূল পরিকল্পনায় প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবার কথা ছিল। নতুন সংশোধিত প্রস্তাবে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১১ নভেম্বর একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মকর্তারা বলেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সংকট প্রকল্পের অগ্রগতিতে প্রভাব ফেলেছে। ২০২৫ সালের ৩ জুন অনুষ্ঠিত ৯০তম যৌথ সমন্বয় সভায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে আন্তঃসরকারি চুক্তির আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পে ২,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট নির্মাণ, সরঞ্জাম সরবরাহ, প্রশিক্ষণ ও জ্বালানি সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পাবনা জেলায় অবস্থিত।
ব্যয় বৃদ্ধির অন্যান্য কারণ
পূর্ত কাজ, যন্ত্রপাতি আমদানি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ, নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় বাড়েছে। নতুন নকশা অনুযায়ী নিরাপত্তা অবকাঠামো, পরিবেশ মনিটরিং ও সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, সংশোধনের মূল উদ্দেশ্য ব্যয় বৃদ্ধি নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান নিশ্চিত করে প্রকল্পকে টেকসই ও কার্যকরভাবে চালু করা। সংশোধিত প্রস্তাবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ইউনিট ও পরামর্শক খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ:
- সিডি-ভ্যাট খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৩৭৮.৪০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
- অফিস সরঞ্জামের জন্য ৩৭.৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
- ১০২টি যানবাহনের জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
- অতিরিক্ত ৩৩৬টি চুক্তি, জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি ও ওভারটাইম খাতে ১০.২৬ কোটি টাকা নতুন বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রথম ইউনিটটি ২০২৬ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করবে। মূল পরিকল্পনায় এটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল। বিলম্বের কারণে তা নির্ধারিত সময়ে সম্ভব হয়নি।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে চালুর জন্য জ্বালানি লোড করা হবে। ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ সক্ষমতায় আংশিক উৎপাদন শুরু হবে। ধাপে ধাপে উৎপাদন বাড়িয়ে পূর্ণ সক্ষমতা, অর্থাৎ ১,২০০ মেগাওয়াটে পৌঁছানো হবে। দ্বিতীয় ইউনিট যোগ হলে কেন্দ্রের মোট ক্ষমতা হবে ২,৪০০ মেগাওয়াট।
এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৪.২৪ শতাংশ। রাশিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে।

