বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন যে, দেশের ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের পুনর্গঠন এবং নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ব্যাংক লুট ও অর্থপাচারের অভিযোগে যেসব ব্যক্তি—বিশেষ করে এস আলম ও নজরুল ইসলাম মজুমদার—অপরাধ করেছেন, তারা আর কখনো দেশের ব্যাংক খাতে মালিকানায় ফিরতে পারবেন না।
তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা চলছে এবং এস আলমের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ব্যাংক লুটে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী তারা আর ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবে না। এছাড়াও, দেশ থেকে জনগণের অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গভর্নর বলেন, পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করা হয়েছে এবং বিদ্যমান পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। এই ব্যাংকগুলো হলো:
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
- সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক
- ইউনিয়ন ব্যাংক
- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
- এক্সিম ব্যাংক
পাঁচ ব্যাংকের মোট ৭৫ লাখ আমানতকারী রয়েছেন। লুটপাটের কারণে পরিচালকদের প্রতি ১০ টাকার শেয়ারের মূল্য ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা ঋণাত্মক অবস্থায় নেমে গেছে। ফলে এস আলম, নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ পরিচালকদের শেয়ার শূন্যে রূপান্তরিত হবে। ইসলামী ব্যাংকে থাকা এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে তার ঋণের দায় সমন্বয় করা হবে।
গভর্নর উল্লেখ করেন, দেশে বর্তমানে সবচেয়ে বড় ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ১,৫০০ কোটি টাকা, কিন্তু এই পাঁচ ব্যাংকের একীভূত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫,০০০ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। নতুন ব্যাংকটি সরকারি ব্যাংক হলেও চলবে বেসরকারি ব্যাংকের মতো।
পাঁচজন প্রশাসকই আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার কার্যক্রম দেখবেন। প্রথম পর্যায়ে প্রতি আমানতকারীকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত শতভাগ ফেরত দেওয়া হবে। বাকি আমানত ফেরতের প্রক্রিয়া একটি সরকারি গেজেটে সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করা হবে।
প্রশাসক হিসেবে নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা হলেন:
- এক্সিম ব্যাংক: শওকাতুল আলম
- সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক: সালাহ উদ্দিন
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার
- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: মো: মোকসুদুজ্জামান
- ইউনিয়ন ব্যাংক: মোহাম্মদ আবুল হাসেম
গভর্নর জানান, একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের জন্য ইসলামী ব্যাংক থেকে ১০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাবে। কিভাবে এই অর্থ ফেরত পাবেন তা শিগগিরই গেজেটে প্রকাশ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এস আলম দেশের ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা বেনামে হাতিয়ে নিয়েছেন। এর বেশির ভাগই বিদেশে পাচার হয়েছে। এই লুটপাটের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকে প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে।
গতকালের পদক্ষেপের মধ্যে, পূর্বে এস আলম ও নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি, সোস্যাল, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ব্যাংকগুলো এবং এক্সিম ব্যাংক পুনর্গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫ সদস্যের পর্ষদ গঠন করা হয়েছিল; কিন্তু পুনর্গঠন শেষে প্রতিটি ব্যাংকে প্রশাসক বসানো হয়েছে, যারা প্রথম ধাপে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেবেন।
গভর্নর আশ্বাস দেন, দেশের জনগণের আমানত নিরাপদ থাকবে এবং ব্যাংক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত হবে।
অতিরিক্ত তথ্য:
- পাঁচ ব্যাংকের মোট শাখা সংখ্যা ৭৫০।
- শাখার কর্মী-জনবল বর্তমান অবস্থায় থাকবেন; তাদের বেতন ও সুবিধা অপরিবর্তিত থাকবে।
- পুঁজিবাজারে শেয়ারহোল্ডাররা আর কোনো অর্থ পাবেন না। তবে যারা বন্ডে বিনিয়োগ করেছেন, তারা তাদের বিনিয়োগ অনুযায়ী ফেরত পাবেন।

