ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ লিমিটেডকে নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে একটি পূর্ণাঙ্গ কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, অধিকারকর্মী ও ধূমপানবিরোধী সংগঠনগুলোর সমালোচনা সত্ত্বেও ফিলিপ মরিসকে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি সরকারের একজন প্রতিনিধি। জনগণ আমাকে যে ম্যান্ডেট দিয়েছে, সেটা সংবিধান ও আইনের অধীনে পরিচালিত হয়। আইন আমাকে বলছে, এটি বাংলাদেশে সম্পূর্ণ বৈধ ব্যবসা।” প্রকল্পটিতে ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে ৫.৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।
আশিক চৌধুরী বলেন, “যারা বলছেন অনুমোদন দেওয়া উচিত হয়নি, তারা নিশ্চয়ই তাদের বিবেক থেকে বলছেন কিন্তু সরকারের একটি নীতি এবং কাঠামো আছে, যা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যদি প্রত্যেক নীতিনির্ধারক ব্যক্তিগত বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে, তাহলে সরকার সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না।”
তিনি আরো বলেন, “আমি প্রযুক্তিগত বা জ্ঞানগত বিতর্কে যাচ্ছি না। একটি পাউচ বিড়ির চেয়ে খারাপ কি না, এটা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা চলছে। অনেক দেশ নির্দিষ্ট পথে এগোচ্ছে। কিন্তু আমরা রাতারাতি সবকিছু বন্ধ করতে পারব না।” তিনি উল্লেখ করেন, “মানুষ এই বিষয়ে আলোচনা করতে পারে এবং করা উচিত। আমারও ব্যক্তিগত মত আছে। তবে আমার প্রশ্ন হলো—আমাদের মনোযোগ কি বিতর্কে থাকা উচিত নাকি কর্মসংস্থান তৈরি ও জাতীয় অগ্রাধিকারে থাকা উচিত? ভারসাম্য রাখা জরুরি।”
ফ্যাক্টরি স্থাপনের বিষয়ে আশিক চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে আমার প্রথম প্রশ্ন হলো—বাংলাদেশের শিল্পনীতি ও আইন কি এই ফ্যাক্টরির স্থাপনকে বাধা দিচ্ছে? যদি আইন বাধা না দেয়, তাহলে আমি কিভাবে ব্যক্তিগত বিচারবোধ দিয়ে অনুমোদন না দেব?”
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অনুমোদনের অভিযোগ অধিকারকর্মীদের:
ধূমপানবিরোধী অধিকারকর্মীরা গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। তারা নিকোটিন পাউচ কারখানার অনুমোদন বাতিলের দাবি জানান। আন্দোলনকারীরা বলেন, নিকোটিন পাউচ তামাক কোম্পানিগুলোর তৈরি নতুন ফাঁদ। এটি মুখের ভেতরে রেখে ব্যবহার করা হয় এবং তরুণদের মধ্যে আসক্তি সৃষ্টি করে। তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এটি অত্যন্ত আসক্তিকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে। নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, রাশিয়া ও ফ্রান্সসহ ৩৪টি দেশ এই পণ্য নিষিদ্ধ করেছে।”
বিক্ষোভটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যান্টি টোব্যাকো অ্যালায়েন্স ও বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস (বিটিসিএ)। উপস্থিত ছিলেন বিটিসিএ’র আহ্বায়ক ইকবাল মসুদ, তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক ফারাহানা জামান লিজা এবং বাংলাদেশ অ্যান্টি টোব্যাকো অ্যালায়েন্সের দফতর সম্পাদক সৈয়দা অনন্যা রহমান।
বক্তারা উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্পষ্টভাবে রায় দিয়েছিল যে দেশে নতুন কোনো তামাক কোম্পানি বা কারখানার অনুমোদন দেওয়া যাবে না। বিদ্যমান তামাক কোম্পানিগুলোকে অন্য শিল্পে রূপান্তরিত করা উচিত। প্রতিবাদকারীরা বলছেন, “বেজা শুধু জনস্বাস্থ্য বিষয়ক দায়িত্ব লঙ্ঘন করেনি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাও ভঙ্গ করেছে।”
এ বিষয়ে ৪ নভেম্বর ২০২৫ প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে পাবলিক হেলথ ল’য়ার্স নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ বলেন, নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থী। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ধূমপান ও তামাক ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। জনগণকে তামাকজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু বেজা বহুজাতিক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে অনুমোদন দিয়ে আদালতের নির্দেশনা ও সরকারের নীতির পরিপন্থি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালের ১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দেশে নতুন তামাক কোম্পানি বা কারখানার অনুমোদন না দেওয়ার রায় দিয়েছিল। বেজার এই অনুমোদন শুধু আদালতের নির্দেশনা নয়, রাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য রক্ষার অঙ্গীকারও লঙ্ঘন করেছে। সংগঠনটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ফিলিপ মরিসের নিকোটিন পাউচ কারখানার অনুমোদন বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

