বাংলাদেশে সব মেয়াদের ট্রেজারি বিলের (টি-বিল) সুদের হার আবারও ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সরকারি ঋণগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় এবং ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের কারণে সুদহার বৃদ্ধি পেয়েছে।
রবিবার ৯১, ১৮২ ও ৩৬৫ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদের হার ৫ থেকে ৫৫ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়েছে। এদিন ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদ দাঁড়িয়েছে ১০.০৮ শতাংশ, ১৮২ দিনের ১০.৩০ শতাংশ এবং ৩৬৫ দিনের ১০.০৪ শতাংশে। তুলনামূলকভাবে দুই সপ্তাহ আগে ৯১ দিনের সুদ ছিল ৯.৫২ শতাংশ, ১৮২ দিনের ৯.৯৭ শতাংশ এবং ৩৬৫ দিনের ৯.৯৯ শতাংশ। অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, সুদের হার বাড়ার মূল দুটি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, সরকার সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর প্রান্তিক পর্যন্ত ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ঋণগ্রহণ বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে সরকারের হাতে নগদ অর্থের ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, এ প্রান্তিকে সরকার নিট ২২,০০০ কোটি টাকা বেশি ঋণ নেবে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুদের হারও বাড়ছে।
দ্বিতীয়ত, বাজারে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা বন্ধ রাখায় বাজারে নগদ সরবরাহ কমেছে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ নয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব আদায় প্রত্যাশা অনুযায়ী না হওয়ায় সরকারের তহবিল ঘাটতি বেড়েছে। বিপরীতে ব্যয়ের চাপও বেশি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “দুটি কারণে ট্রেজারি বিলের সুদের হার বাড়তে পারে—সরকারের ঋণগ্রহণ বাড়লে এবং বাজারে তারল্য কমে গেলে। প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায় ভালো ছিল, তবে এখন তা কিছুটা ধীর হয়েছে।”
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “সরকার ব্যাংক খাত থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কম থাকায় ব্যাংকগুলো সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে আগ্রহী, কারণ এটি নিরাপদ এবং ভালো রিটার্ন দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেনা বন্ধ রাখায় বাজারে তারল্য টাইট হয়ে গেছে, ফলে সুদের হার বেড়েছে। সরকারের ফান্ড সংকটও রয়েছে। আইএমএফ জানিয়েছে, নির্বাচিত সরকার গঠনের পর বাকি কিস্তির অর্থ পরিশোধ করা হবে। তাই সরকারের তাৎক্ষণিক অর্থের চাহিদা মেটাতে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে।”

