দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল রবিবার বড় দরপতন দেখা গেছে। বাজারে যেসব শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে, তার তুলনায় প্রায় দশ গুণ বেশি সংখ্যকের দরপতন হয়েছে। এই বড় পতনের কারণে এক্সচেঞ্জের সব মূল সূচক দিনের ব্যবধানে এক শতাংশ বা তার বেশি কমেছে। লেনদেনের পরিমাণও দিনের মধ্যে কিছুটা কমে এসেছে।
বাজার বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের আগে দীর্ঘ বছর ধরেই বাজারে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। এবারের অস্থিরতা আগের তুলনায় কিছুটা বেশি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। এই অনিশ্চয়তা পুঁজিবাজারেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হওয়ার কিছু নেতিবাচক প্রভাবও বাজারে দেখা যাচ্ছে বলে মত একাংশের।
মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশেকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার প্রভাব পুঁজিবাজারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অতীতে জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। মার্জিন ঋণের বিধিমালার গেজেট নিয়েও অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। যদিও এই বিষয়গুলো অনেক আগে থেকেই জানা ছিল, তবু কিছু আতঙ্কিত বিনিয়োগকারী গুঞ্জন ছড়াচ্ছেন। এটি আজকের বাজার পতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করেছে।’
রবিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বড় দরপতন হয়েছে। দিনের শুরুতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়লেও মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই বাজারের চিত্র বদলে যায়। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একে একে প্রতিষ্ঠানগুলো দরপতনের তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের শেষ দিকে ভালো-মন্দ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের ঢালাও দরপতন হয়। এতে মূল্যসূচকের বড় পতনের মধ্য দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ‘মার্জিন ঋণ বিধিমালায় পুরোনো বিনিয়োগকারীদের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। নতুন ঋণগ্রহীতাদের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। মূলত বাজারের পতনে নির্বাচন সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার প্রভাব বেশি। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় না থাকার কারণে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। বাজারও তার নিজস্ব গতি ফিরে পাচ্ছে না।’ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই ধরনের অস্থিরতা স্বাভাবিক। তবে এবারের অনিশ্চয়তা আগের তুলনায় বেশি। বিনিয়োগকারীর মনোবল ও বাজারের গতিশীলতাকে এই অনিশ্চয়তা সরাসরি প্রভাবিত করছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব খাত মিলিয়ে মাত্র ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৩২৯টির দাম কমেছে এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। ভালো মানের বা ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া ২৫টি কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে। তবে ১৬৯টির দাম কমেছে এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির মধ্যে ৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৭২টির দাম কমেছে এবং ২টির দাম অপরিবর্তিত ছিল।
বিনিয়োগকারীর লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে ‘জেড’ গ্রুপে থাকা কোম্পানির মধ্যে ৪টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৮৮টির দাম কমেছে এবং ৫টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। ৩৫টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে একটির দামও বাড়েনি। ২৫টির দাম কমেছে এবং ১০টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। এর ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৮ পয়েন্ট কমে ৪,৮৯৯ পয়েন্টে নেমেছে। এটি ৩ জুলাইয়ের পর থেকে ডিএসইর প্রধান সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান।
অন্য সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে ১,০২২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসই-৩০ সূচক, যা ৩০টি ভালো কোম্পানির উপর ভিত্তি করে গঠিত, আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ১,৯২৮ পয়েন্টে নেমেছে। সব সূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। রবিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪০২ কোটি ২০ লাখ টাকার। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪১৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এতে ১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কমেছে। লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি টাকায়। দ্বিতীয় স্থানে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ১৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় এবং তৃতীয় স্থানে মোনোস্পুল পেপার ১৩ কোটি ৩ লাখ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ওরিয়ন ইনফিউশন, সায়হাম কটন, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, রানার অটোমোবাইল, সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল এবং শাহজিবাজার পাওয়ার। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৫ পয়েন্ট। এখানে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১০৯টির দাম কমেছে এবং ৪টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়।

