দেশে কৃষিপণ্যের বাজারে অর্থনীতির সাধারণ সূত্র ভাঙা যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি থাকলেও পিঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২ হাজার ৯৩৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪৪ লাখ টন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে ২ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ছিল প্রায় ৪০ লাখ টন।
তবে উৎপাদন বেশি থাকা সত্ত্বেও নভেম্বরে পিঁয়াজের খুচরা মূল্য বেড়ে ৭৫ টাকা থেকে ১১০ টাকা, আদার দাম ১৭৫ টাকা থেকে ১৮৫ টাকা এবং রসুনের দাম ১৬৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় ওঠে। টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) জানিয়েছে, ৫ নভেম্বরের তুলনায় পিঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩৫, আদা ১০ ও রসুন ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
মূল্য ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকার বিশেষ টাস্কফোর্স মাঠে নামিয়ে বাজার তদারকি করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠানো হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, “গত এক সপ্তাহে পিঁয়াজের খুচরা মূল্য ৪০–৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতি বছরের নভেম্বরে পিঁয়াজসহ কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যায়, যা সাধারণত সাময়িক। তবে এবার বৃষ্টির কারণে সরবরাহ হঠাৎ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। শিগগিরই মুড়িকাটা পিঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কমার আশা করা হচ্ছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন রবিবার সচিবালয়ে পণ্য উৎপাদন, চাহিদা ও বর্তমান বাজারদর নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সিন্ডিকেট ও মজুতদারির বিরুদ্ধে বিশেষ টাস্কফোর্স পরিচালনা এবং আমদানি বৃদ্ধি করে বাজার স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ট্যারিফ কমিশন পিঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা থেকে বার্ষিক উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য সংগ্রহের সুযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সাবেক সচিব ও ক্যাব প্রেসিডেন্ট এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে পিঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। উৎপাদনসংক্রান্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমদানির অনুমতি যথাসময়ে না দেওয়াটাই বাজার অস্থিতিশীলতার মূল কারণ।”
তিনি আরো বলেন, “কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার কথা বলে আমদানির বাধা দিচ্ছিলো, কিন্তু পণ্যটি এখন ফড়িয়ার হাতে চলে গেছে।”

