সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯.৯৮ শতাংশে, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগের মাস আগস্টে আমানতের বৃদ্ধির হার ছিল ১০.০২ শতাংশ—যা ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। দুই মাসের টানা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ব্যাংক খাতে পুনরায় আস্থা ফিরতে শুরু করার প্রমাণ দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টের আগে একবছরেরও বেশি সময় ধরে আমানতের বৃদ্ধি ৯ শতাংশের নিচে ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদিও সেপ্টেম্বরের প্রবৃদ্ধি সামান্য কমেছে, তবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে এটি গত ১৬ মাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি।
ব্যাংকাররা সেপ্টেম্বরের এই প্রবৃদ্ধির তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন।
প্রথমত, টপ-টিয়ার ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়ছে। কঠোর আইন মেনে এবং শক্তিশালী কমপ্লায়েন্স বজায় রাখার কারণে গ্রাহকরা এই ব্যাংকগুলোতে আস্থা রাখছেন। সরকার পরিবর্তনের পর দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলে গ্রাহকরা এই ব্যাংকগুলোতে আমানত রেখেছেন।
দ্বিতীয়ত, ব্যাংক আমানতের সুদের হার এখনও প্রায় ৮.৫–৯.৫ শতাংশে রয়েছে। সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৩৬ শতাংশ, ফলে ব্যাংক আমানতের প্রকৃত সুদের হার পজিটিভ। কিছু ব্যাংকে সাধারণ সুদের চেয়ে ২৫–৫০ বেসিস পয়েন্ট বেশি দেওয়া হওয়ায় এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়েছে।
তৃতীয়ত, সেপ্টেম্বরে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার কমতে শুরু করেছে। এর ফলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনেকেই বিল-বন্ডের পরিবর্তে ব্যাংকে আমানত রাখতে শুরু করেছেন।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন বলেন, “ভালো কমপ্লায়েন্স ও নিয়মনীতি মানা ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের আস্থা বাড়ছে। সরকার পরিবর্তনের পরও এসব ব্যাংকে আমানত বেড়েছে। ব্যাংকিং খাতের এই ঋণাত্মক পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার প্রমাণ আমরা দেখতে পাচ্ছি।”
মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি আহসান-উজ জামান যোগ করেছেন, “যেসব ব্যাংকের সার্বিক মান উন্নত, সেসব ব্যাংকে আমানত বাড়ছে। ব্যাংকিং খাতের ওপর আস্থা আগের তুলনায় বেড়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবি ও আইএফআইসিতে আস্থা ফিরছে
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আইএফআইসি ব্যাংক এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে গ্রাহকদের আস্থা ফেরার সঙ্গে সঙ্গে আমানতও বেড়েছে।
-
ইসলামী ব্যাংকের আমানত এক বছরে ১৪.৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা।
-
আইএফআইসি ব্যাংকের আমানত এক বছরে ১২.৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫১ হাজার ১২৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
-
ইউসিবিতে এক বছরে ১১ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি হয়েছে, আমানত দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকের বাইরে থাকা অর্থও কমেছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময় ছিল ২ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে এই নগদ অর্থের পরিমাণ ৮,৮২৯ কোটি টাকা কমেছে। তবে এই অর্থ ব্যাংকে এসেছে কি না তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
মোটকথা, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের এই প্রবৃদ্ধি ব্যাংকিং খাতে পুনরায় আস্থা ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সুদের আকর্ষণ, টপ-টিয়ার ব্যাংকের মান এবং ট্রেজারি বিলের প্রভাব মিলিতভাবে আমানত বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

